Pallabi - Pallabi Das
First Part
বেশ রাত। পাহারাদারের বাঁশির আওয়াজে ঘোর ভাঙলো উশ্রীর। আদুর গায়ে কম্বলটা গলা অব্দি টেনে নিল। নভেম্বরের শেষ দিক। বাতাসে শীত শীত ভাব। পাশে তাকিয়ে দেখল কেতন অঘোরে ঘুমোচ্ছে। একপলক মন দিয়ে তাকিয়ে থাকলো উশ্রী। ঘন্টাদুই আগে যে মানুষটি ভীষণ রোষে তার উপর পীড়ন চালাচ্ছিল। এখন তার ঘুমন্ত মুখ দেখে সেসব বোঝে কার সাধ্যি! স্ত্রী হিসাবে উশ্রী অসুখী নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া উশ্রীর আলতা রাঙানো পদক্ষেপ যখন প্রথম এই ৩ বেডরুম সল্টলেকের ফ্ল্যাটবাড়িতে পড়ে, সে বুঝতে পারেনি বরানগরে সুবিশাল পৈতৃক বাড়ি থাকা সত্ত্বেও এই আলাদা ছাদের প্রয়োজন কি। কাজের সুবিধার্থে, পার্সোনাল স্পেস ইত্যাদি যুক্তি মনে সাজিয়ে নিতে নিতে মনকে তৈরী করতে থাকে নামী সফটওয়্যার এনালিষ্ট কেতন ব্যানার্জীর স্ত্রী উশ্রী ব্যানার্জী। যুক্তি নস্যাৎ হয় ফুলশয্যার রাত্রির পর। পরবর্তী দুদিন বিছানা সংলগ্না উশ্রীর বালিশের কভার নিঃশব্দে ভিজতে থাকে। সেই সপ্তাহান্তে উশ্রী প্রথম আভাস পায় কেতনের বিকৃতির কথা।
"তোমার হাতটা মাথার উপরে তোলো। টাই দিয়ে বাঁধবো। রিল্যাক্স! এন্ড এনজয়।"
Second part
আমি উশ্রী। বিবাহিত।
আমার হাসবেন্ড কেতন ব্যানার্জী একটি নামজাদা সংস্থায় সফটওয়্যার এনালিস্ট।
আমি? না না চাকরী করিনা।
এই ঘর সংসার। বিকেলের বারান্দা। ভোরবেলার একচিলতে রোদ্দুর। পাখির ডাক।
এই নিয়েই আমি... বেশ ভালো আছি।
আমার বাপের বাড়ী উত্তর কলকাতার শ্যমবাজারে। ওখানকারই একটি কলেজে ইতিহাসে স্নাতক। পরের বছরই বিয়ে হয়ে গেল জানেন। বয়স্ক বাবা মা। তারপর ছোট বোন তিন্নি। অতএব। 'ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে!'
আমার প্রিয় বান্ধবী রুণা।
বিয়ের দিন আমার স্বামীকে দেখে এসে গায়ে ঠেলা মেরে বলেছিল, আমার বর নাকি বেশ হ্যান্ডসাম।
শুভদৃষ্টির সময় ওই যতটুকু দেখা আরকি। রুণা যে আমার মন রেখে কথাকটা বলেনি এক দেখাতেই বুঝেছিলাম। ছবি আমাকে দেখানো হয়নি আগে। বাবা-মায়ের আমার অপরিসীম শাসন ছোটবেলা থেকেই।
বিয়ের পরে কালরাত্রী কাটলো বরানগরের বাড়ী।
ওই দেখুন বলতেই ভুলে গেছি। আমি সল্টলেকে একটি ৩ কামরার ফ্ল্যাটবাড়ীতে আমার হাজবেন্ডের সাথে থাকি।
কি জানি বলছিলাম? হ্যাঁ। বিয়ের পরে প্রথম আসি বরানগরের বাড়ী। পাঁচ পুরুষের বাড়ী। একজন কাজের লোক, অতসীপিসিই বললেন। ভাত-কাপড়ের অনুষ্ঠানে শাশুড়িকে গোমড়া মুখে দেখে কেমন একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম জানেন।
অনুষ্ঠানের পর উনি কাছে ডাকলেন।
"দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে শেষের কটা দিন আনন্দে থাকবো। তা আর মদনমোহন হতে দিলেন কই। তা তুমি মা এসব গহনাগাটি নিয়ে একা একা সাবধানে থাকবে। ওসব দিক ভালো না। দিনদুপুরে ডাকাতি হয় শুনেছি। কিছু চাইলে আমার কাছে রেখে যেতে পারো। তোমারই জিনিস মা। তোমারই থাকবে।"
ব্যাপারটা বিশেষ বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম। সমস্ত অনুষ্ঠান শেষে বাইরে বেরোনোর নির্দেশ এলো। আজ ও ফুলে ফুলে একটি গাড়ী সাজানো। উঠে পড়লাম।
"সল্টলেকে আমাদের বাড়ী যাচ্ছি। ওখানেই থাকবো। তোমার বিশেষ অসুবিধা হবেনা । হলে বলো।"
পাশে বসা মানুষটি বলেছিল সেদিন।
বৌভাতের রাত।
ফুল-আলো। সুগন্ধ। দুটি মানুষ।
দুটি শরীর।
হৃদয়হীন। বাক্যহীন। বিনিময়হীন।
বাকি রাত আধো ঘোরে। আধো যন্ত্রনায়।
ঘুম তেমন হয়নি সেদিন। ওই ভোরের দিকে সামান্য। পরবর্তী কিছুদিন খুব কষ্টে কাটিয়েছিলাম। আমার স্বামী কোনো কাজে জোর করেননি। সকালে মাথার পাশে টেবিলে খাবার ঢাকা দেওয়া থাকতো। রাত্রে খাবার একদিন নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছিলেন। হাসতে হাসতে অফিসের গল্প করছিলেন। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম।
মানুষটা কি সেই। সে রাত্রের মানুষটা?
দিনসাতেক পর একটি বড় রেস্তোরাঁতে খেতে গেলাম। ভারী সুস্বাদু খাবার।
শেষ গন্তব্য শোবার ঘর।
"তোমার হাতটা মাথার উপরে তোলো। টাই দিয়ে বাঁধবো। রিল্যাক্স! এন্ড এনজয়।"
Third part
তোমার হাতটা মাথার উপরে তোলো। টাই দিয়ে বাঁধবো। রিল্যাক্স! এন্ড এনজয়।"
বুকের ভিতর অব্দি কেঁপে উঠেছিল সেদিন।
সেই রাত্রি থেকে আমার নরকবাস শুরু।
না না। নরকের থেকেও বোধ হয় বেশি ভয় পেতাম শোবার ঘরখানি।
কয়েক ঘন্টার তফাতে বদল যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। আমার স্বামী বুঝিয়েছিলেন।
পড়াশুনা শুরু করি।
সেডোমাচোকিসম। বন্ডেজ। ডোমিনান্স।
টানা ৩দিনের পড়াশুনা শেষে, লো প্রেশার হয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ৪-৫ ঘন্টা পড়ে ছিলাম। জ্ঞান আসে নিজের বাড়িতে। পাশে তাকিয়ে রুণাকে পেয়েছিলাম।
সেদিন আর নিজেকে আটকাতে পারিনি।
রুণাকে সমস্ত সত্যিটা জানাই।
"এমন কিছু ব্যাপার না। কেতনদা যতদিন শুধু তোর সাথে এই ব্যবহার করছে, ততদিন অব্দি নিশ্চিন্তে থাক। বরং সাবধান হ উশ্রী। কেতনদাকে কোনোমতেই ডিসসাটিসফায়েড রাখিসনা। তুই কি চাস তোর সংসারটা এরকম একটা সামান্য কারণে ভেঙে যাক? কাকু-কাকিমার কথা ভাব। তিন্নির কথা ভাব।"
রুণার পরামর্শে পরের দিনই বাড়ি ফিরে এলাম।
৬ মাস কেটে গেছে।
আমার স্বামী খুব ভালোমানুষ।
আমি সুখী।
আসছে রবিবার আমরা থাইল্যান্ড যাচ্ছি ঘুরতে। বিয়ের পর এই নিয়ে তৃতীয়বার।
এই যা ভোর হয়ে আসছে।
কথায় কথায় কিভাবে যে সময় কেটে যায়।
গাছগুলোতে জল দিতে যেতে হবে....