আপনজন - Shyamal Kumar Sarkar
আপনজন
শ্যামল কুমার সরকার
এ বাড়ীর উঠোনটা সুন্দর করে লেপানো
পায়ের জুতোটা যথাস্থানে রেখে
এ মন্দিরে প্রবেশ করতে হয় ।
মাঝের তুলসী গাছটা দেখে মনে ভক্তি জাগে
হাত দুটো কপালে ওঠে নিজের অজান্তেই
ইশ্বরের নামে শতকোটী প্রনাম জানায় ।
চারিদিকে একটা সোঁদা গন্ধ ম-ম করে সদা সর্বদা
মানুষগুলো সব যেন কেমন অগোছালো
আটপৌড়ে জীবনটা যেন বড়ো এলোমেলো
এই শান্তীর নীরে বসে দুদন্ড বিশ্রাম নেওয়া যায়
দূরের গাছপালা দেখে মনটা জুড়ায় ।
এ বাড়ীতে নেই কোনো কৃত্তিমতার লেশ
সবাই কেমন যেন গোবেচারা
ভক্তিভ’রে সবাইকে আপন করে নেয়
দৈনদশাকে আমূল না দিয়ে
মানুষকে দেবতার আসনে বসায় ।
এরা জানে না মানুষ ঠকিয়ে মানুষের ক্ষতি করতে
এরা মানুষের মাঝে সত্যিই মহান ।
**************************************
ভুল সব ই ভুল
শ্যামল কুমার সরকার
চোখের পাতায় জল দেখে ভেব না আমি কাঁদছি
এটা আনন্দাশ্রুও হতে পারে
কষ্ট পেলে মানুষের দুঃখ হয়, চোখে জল আসে
কেউ গুমরে গুমরে কাঁদে
অনেক কষ্টে গড়া, এ জীবনের যত বোঝাপড়া
সব যখন পূর্ণতাপ্রাপ্তি পায়
তখন মানুষ ভেবে পায় না হাঁসবে না কাঁদবে
বুকের যন্ত্রনা কিছুটা হাল্কা হলে আপনা আপনিই
চোখের জলে ভেসে যায় এ সংসার
এ আনন্দাশ্রু দেখে লোকের ভ্রম হয়
আসল নকলের ভেদাভেদ বোঝা দায়
দুঃখের সাগরে ভেসে যেতে যেতে
হঠাৎ-ই সে খুঁজে পায় সুখের সাগরের সন্ধান
হিসাবের খাতায় নতুন করে লিখতে বসে জীবনের জয়গান ।
আমার ঠোঁটের হাল্কা হাঁসি দেখে ভেব না
আমি খুব সুখে আছি
এটা কৃত্তিমও হতে পারে
আমার বুকের যত যন্ত্রনা, মনের যত বাসনা
সব অপূর্ন থেকে গেল
তবু মুখের হাঁসি মিলিয়ে যায় নি
রুদ্ধদ্বারে তাদের ছটফটানি দেখেও দু হাত দিয়ে চেপে রেখেছি
বলেছি ধৈর্য ধর, সাফল্য একদিন না একদিন আসবেই
তোমাদের সামনে কৃত্তিম হাঁসি হেঁসেছি
তাই দেখে ভেব না আমি খুব সুখে আছি
সুখ সম্মুখে, তাই দুঃখ ভুলে ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছি
আমার অভিষ্ট পথে, লক্ষ্য স্থির রেখেছি
তবু ভয় হয়
কখন কি ঘটবে বিপর্যয়
জীবনের চলার পথ বড়োই কঠিন
এই পিচ্ছিল পথে যে কোনো সময়
পদঙ্খলন হতে পারে ।
দুই বন্ধু হাত ধরাধরি করে যাচ্ছে
ওরা নিবেদিত প্রাণ, এ ওকে ছেড়ে থাকতে পারে না
ওদের কোমল হৃদয়ে শুদ্ধ রক্তধারা বইছে
জগতের সুখ দুঃখের কোনো খবরই ওরা রাখে না
ওরা দু হাতে কল্প ডানা মেলে
মুক্ত আকাশে ভেসে চলেছে
ওরা আগামী দিনের পথপ্রদর্শক, জাতীর ভবিষ্যৎ
আর্তজনে নিবেদিত প্রাণ
তাই দেখে ভেব না ওদের মধ্যে হিংসা নেই
প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাজারে কেউ পিছিয়ে থাকতে চায় না
বড়ো হবার স্বপ্ন সবারই আছে
মনের গভীরে স্বযত্নে লালিত স্বপ্নগুলো
ধীরে ধীরে ডাল পালা মেলছে
স্বার্থে ঘা লাগলে যে কোনো সময় মাথা ঘুরে যেতে পারে
তখন ওরাও সুযোগ পেলে ক্লাসের পড়া ফেলে
নিজেদের মধ্যে খুনো-খুনিও করতে পারে
এ সমাজে সব ই হয় ভাই সব ই হয়
কিছুই অসম্ভব নয়
তাই সাবধানে পা ফেলতে হয়
প্রশ্রয়ে পতন আর কঠোরতায় সব ছাড়খার হয়ে যায়
একটু ভুলে মানুষ গড়তে গিয়ে তা
বন মানুষও হয়ে যেতে পারে ।
ওরা ভারতের পতাকা নিয়ে
হৈ হৈ রৈ রৈ করে হেঁটে যাচ্ছে
ওরা স্বাধীনতাকামী বীরপুরুষ
মুক্ত হতে চায় পরাধীনতা থেকে
ওদের উদ্দম আর উৎসাহ দেখে
চোখে জল আসে, মনে জোড় পাই
কেউ কি ভেবেছে কোনোদিন যে
ওদের মধ্যে কেউ কেউ জুডাসও হতে পারে
যারা সামনে ভালোমানুষ
পিছন থেকে ছুরিও মারতে পারে ।
***********************