বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

ভালবাসা সেই অদ্ভুত ভালোলাগা...... - বিশ্বজিৎ সরকার

-অন্তরা।এই অন্তরা।ওঠ,ক্লাসে যাবিনা?
-উঁহু,বিরক্ত করিস না।ঘুমাতে দে।
-না তোকে এখনি উঠতে হবে।৭টা বাজে।১মিনিট লেট হলেও শহীদ স্যার ক্লাসে ঢুকতে দেবে না ।ওঠ ।
তুষ্টির ডাকাডাকিতে উঠতে হয় অন্তরাকে ।এরপর ব্রাশ নিয়ে বাথরুমে দৌড়ালো ও।ফ্রেশ হয়ে আসতেই তুষ্টির ঝাড়ি খেলো অন্তরা ।
-রাত জেগে এত কি কথা বলিস বলতো?এভাবে রোজ তোকে ডাকতে পারবোনা আমি ।কাল থেকে নিজে উঠবি,আমি আর ডাকাডাকিতে নেই ।
অন্তরা জড়িয়ে ধরে তুষ্টিকে ।আদুরে গলায় বলে ,
-তুই না আমার সুইটু।আমি ক্লাসে যেতে না পারলে তোর ভালো লাগবে?
-থাক।ঢং করিস না।তোর জন্য আমি যদি ঢুকতে না পারি তাহলে তোকে কাবাব বানাবো।
-সেই কাবাব খেতে যে সস লাগবে সেটা আমি কিনে দেবো।
এভাবে খুনসুটি করতে করতে ক্লাসে পৌঁছে যায় ওরা।
-ক্লাসে বসেও ফেসবুক!তোকে নিয়ে আর পারিনা।চাপা গলায় তুষ্টি ধমক দেয় অন্তরাকে।
-তোকে পারতে হবেনা।তুই লেকচার উঠা।
অন্তরা ভীষণ অস্থির স্বভাবের মেয়ে।তুষ্টি ঠিক তার বিপরীত।তবুও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সবার কাছে ঈর্ষনীয়।একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারেনা।হঠাত্‍ অন্তরা ধাক্কা দেয় তুষ্টিকে
-এই তুষ্টি,দেখ মুশফিক একটা নতুনছবি আপলোড করেছে।
মুশফিকের নাম শুনে একটু চমকে ওঠেতুষ্টি। কই,দেখি বলে অন্তরার হাতথেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে দেখতে দেখতে বলে ওঠে,
-অনেক স্মার্ট লাগছে ওকে।
-তাই নাকি!দাঁড়া,কমেন্টে ওকে জানাচ্ছি . .বলে অন্তরা কমেন্ট দেয়
"মুশফিক,তুষ্টি বলেছে তোমাকে অনেক স্মার্ট লাগছে "
সাথে সাথে মুশফিকের পাল্টা কমেন্ট আসে,
"হাহাহা ,তাই নাকি!তো কথাটা শুধুতুষ্টিই বলেছে নাকি তুমিও ...."
পাশে ছেলেদের সারির দিকে তাকিয়ে অন্তরা দেখে মুশফিক ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।ইস,আসছে ভাব নিতে বলতে বলতে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ক্লাসে মন দেয় অন্তরা।মুশফিক ওদেরই ব্যাচমেট।অন্তরাকে পছন্দ করে এটা অন্তরা বোঝে।কিন্তু অমন পছন্দ ওকে অনেকেই করে বলে ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেয়না সে।
-কি রে!এত মনোযোগ দিয়ে কি শুনিস?তুষ্টির কথায় বাস্তবে আসে অন্তরা ।
-না রে,কিছুনা ।আচ্ছা তুষ্টি,মুশফিককে তোর কেমন লাগে ?
-ভালোই তো ।পড়াশুনায় ভালো,ভালো গিটার বাজায়,কবিতা লেখে ...
-আরে এগুলো তো আমিও জানি।আমি বলছি ছেলে হিসেবে কেমন?
-কেন ?তুই প্রেম করবি নাকি!
-আরে দুর!কি যে বলিস।মাথা খারাপ!
অন্তরা তুষ্টির সবচেয়ে কাছের বান্ধবী হলেও ও জানতো না যে তুষ্টি মুশফিককে পছন্দ করে।তুষ্টি খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে..তাছাড়া তুষ্টির ধারণা মুশফিক অন্তরাকে পছন্দ করে।ওর এই ধারণা সত্য প্রমাণিত হয় যখন কিছুদিন পর মুশফিক অন্তরার ফেসবুক ওয়ালে একটা কবিতা পোস্ট করে ।

"স্বপ্নের অগোচরে রেখেছিলাম তোমায়,
একান্ত আপন করে পাবো বলে ..
খেয়ালী কবিতায় লিখেছিলাম তোমার নাম ।
মেঘময় মেয়ে...
হবে কি আমার আকাশের কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ. . .
বৃষ্টিভেজা কদম ফুলের পাপড়ি হবে?
নাকি জানালাগলা ভোরের সোনালী আলো হয়ে ছোঁবে আমায়?
চোখের ক্যানভাসে নীল তুলির টানের আকাশ হও যদি
আমি পায়রা হয়ে উড়বো তোমার বুকের জমিনে "

আজ অন্তরা মুশফিকের পঞ্চম বিয়েবার্ষিকী।এলবাম উল্টিয়ে ছবিগুলো দেখতে দেখতে অতীতে ফিরে যায় মুশফিক।মুশফিকের প্রস্তাবে অন্তরা রাজি হওয়ার পর পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হয় ওদের।প্রথম প্রথম খুব সুখেই কাটছিল ওদের দিন।হঠাত্‍ কি হয়ে গেল।অন্তরা বদলে যেতে থাকল।ওর ফেসবুকে আসক্তি আর ফোনে কথা বলার অভ্যাসটা বেড়ে যেতে লাগল।প্রথমেমুশফিক ভাবতো আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু তা হয়নি।এরই মধ্যে ওদের ঘরে আসে অপ্সরা।অপ্সরার জন্মের পর অন্তরার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে পারেনি মুশফিক।বরং পরকীয়ায় জড়িয়ে যায় অন্তরা।ফলাফলে বিয়ের তিন বছরের মাথায় ডিভোর্স হয়ে যায় ওদের।অপ্সরা থেকে যায় ওর বাবার কাছে।অন্তরা তার পছন্দের ছেলেকেবিয়ে করে চলে যায় দেশের বাইরে।হয়তো ওরা সুখেই আছে,ভাবে মুশফিক।অন্তরার পরিবর্তনের দিনগুলোতে তুষ্টি ওকে অনেক বুঝিয়েছিল।অনেক চেষ্টা করেছিল তুষ্টি ওদের সংসারটা টিকিয়ে রাখার।তারপর ওদের ডিভোর্সের দিনথেকে তুষ্টির আর কোনো খোঁজ জানেনা মুশফিক।কোথায় আছে সে আজ কে জানে।তুষ্টির কথা মনে পড়াতে খানিকটা আনমনা হয়ে যায় মুশফিক।মেয়েটা অনেক ভালো ছিল।হঠাত্‍ অপ্সরার কথায় বাস্তবে আসে সে,
-বাবা,কি করছো একা একা?
-কিছুনা আম্মু।তোমার ঘুম ভেঙে গেল?
-হ্যাঁ বাবা।মামনিকে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল আমার।
মেয়েকে দু'হাতে জড়িয়ে ধরে মুশফিক।তিন বছরের এই বাচ্চা মেয়েটা মা কি জিনিস তা জানেনা।তবুও সে মাকে স্বপ্ন দেখে।হঠাত্‍ মুশফিক অনুভব করে অপ্সরার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
-মামনি!তোমার গায়ে এত জ্বর কেন?কখন আসলো?
মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মুশফিক।এই সময় জ্বর হওয়া ভালো না।তখনি অপ্সরাকে নিয়ে সে ছুটলো ক্লিনিকে।ওর ক্লিনিকে নাকি নতুনএকজন ডাক্তার জয়েন করেছে,শিশু বিশেষঞ্জ হিসেবে।এখনো পরিচয় হয়নি তার সাথে,তবুও তাকেই দেখাবেবলে ঠিক করলো মুশফিক।এটেনড্যান্টকে বলতেই সে তাকে ঢুকতে দিল।ভিতরে ঢুকে যাকে দেখলো তাকে কল্পনাও করেনি সে ।
-তুষ্টি!তুমি এখানে!
তুষ্টিও ভীষণ অবাক হয়েছে মুশফিককে দেখে।
-হ্যাঁ ।এখানেই জয়েন করলাম।কিন্তু তুমি এখানে কেন?
-আমিও তো এখানেই বসি।আজ এসেছি অপ্সরাকে দেখাতে।ভীষণ জ্বর ওর গায়ে।
-কই দেখি বলে অপ্সরাকে পরীক্ষা করতে থাকে তুষ্টি ।নানা পরীক্ষার পর জানা যায় অপ্সরার ডেঙ্গু হয়েছে ।অপ্সরার দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে নেয় তুষ্টি।জ্বরের ঘোরে অপ্সরা মা কে ডাকতে থাকে।"এইযে মা,আমি এখানে"বলে ওকে আগলে রাখে তুষ্টি।ব্যাপারটা মুশফিকের চোখেএড়ায় না।ওর মনে পড়তে থাকে মেডিকেল কলেজের দিনগুলো।তুষ্টিরসাথে ওর খুব ভালো সম্পর্ক যে ছিলো তা নয় ।কখনোই ওর সাথে খোলামনে কথা বলতোনা মেয়েটা ।ও খেয়াল করতো ক্লাসের মাঝে তুষ্টি ওকে দেখছে ।কখনো কোনো ক্লাস মিস করলে সেটা তুষ্টির কাছে চাইতো ও।মেয়েটাও যেন ওকে দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতো ।মনে পড়ে গেল ওর একটা ছবি দেখে তুষ্টি ওকে স্মার্ট বলেছিল ।এখনো বিয়ে করেনি তুষ্টি ।কিন্তু কেন ? আজ এতদিন পর বিষয়গুলো ভাবিয়ে তোলে মুশফিককে ।ও ঠিক করে তুষ্টির সাথে কথা বলবে ।
-তুষ্টি ,তোমার সাথে কথা ছিল ।
-বলো কি কথা ।
-তুমি অপ্সরার জন্য এত পরিশ্রম করছো কেন ?
হঠাত্‍ এই প্রশ্নে হকচকিয়ে যায় তুষ্টি ।কি বলবে ভেবে পায়না ।অবশেষে বলে
-আমি একজন ডাক্তার ।পেশেন্টের খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব ।
-না তুষ্টি ।তুমি যেটা করছো সেটাপ্রফেশনাল মাইন্ডে করছো না ।অপ্সরাকে তুমি নিজের মেয়ের মত যত্ন করছো ।কেন ?
দীর্ঘ একটা মুহুর্ত মুশফিকের চোখে তাকিয়ে থাকে তুষ্টি ।তারপর বলে
-এতদিন যখন বোঝোনি ,তাহলে কখনোই বুঝবেনা তুমি মুশফিক ।
চলে যেতে উদ্যত হয় তুষ্টি ।মুশফিক হঠাত্‍ চেপে ধরে ওর হাত ।
-তুষ্টি ।অন্তরার হৃদয়ে ছোট্ট জায়গা চাইতে গিয়ে আমি অসীম ভালোবাসাকে উপেক্ষা করেছি ।বাকিটা জীবন তোমায় ভালোবেসে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই ।আমায় কি সেই সুযোগ দেবে ?
-দেবো .যদি আমাকে তোমার বুকের জমিনের পায়রা হতে দাও ।
মুশফিক পরম আদরে জড়িয়ে ধরলো তুষ্টিকে ।তুষ্টির চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ।এ অশ্রু সুখের অশ্রু ।