বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

পথের ধারের জীবন - অভিজিৎ পাল

আমরা রোজই তাদের দেখি। পথের ধারেই তাদের সংসার। ওখানেই তাদের শুরু আর ওখানেই তাদের শেষ। আমরা তাদের দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য দুঃখ প্রকাশ করি,তারপর তাদের এড়িয়ে চলে যাই। আর বিদেশীরা তাদের ছবি তুলে নিয়ে যায় এই দেশের চিহ্ন হিসেবে। কিন্তু আমরা কখনও কেউ ভাবিনা যে এরা কারা?বেশ তো আছে আমাদের দেশটা!তবে এই বাড়তি লোক কোথা থেকে আসে আমাদের দেশের সৌন্দর্য্য-এর গায়ে কালি মাখাতে?এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বেরিয়ে পরলাম একদিন। খেয়াল করলাম তাদের জীবন যাত্রা। ডুবে গেলাম দারিদ্রের সমুদ্রে। গরীবের থেকেও গরীব যদি কিছু হ্য়,তবে তারা তাই-ই। তাদের জীবন,রাস্তার কুকুরের থেকেও নিম্নমানের। এ দেশে এ শহরে পশুপ্রেমিক খুঁজলে হয়তো অনেক পাওয়া যাবে,কিন্তু মানুষ প্রেমিক? যারা রাস্তার কুকুরের জন্য বিস্কুট কিনে তাদের মুখের সামনে ধরে,তারা "এদের" জন্য এক ফোঁটা জলও দেয় না,বরং "এদের"-কে দেশের অপমান বলে ধীক্কার দেয়। এদের কাপড় বলতে লজ্জা ঢাকতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই,খাবার একবেলা হয় তো একবেলা হয় না। কোনোদিন না খেয়েই কেটে যায়। শেষে তারা অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করে আর সেই সংগ্রামের অস্ত্র হিসেবে বেছে নেয় চুরি,ছিনতাই,পকেটমারি ইত্যাদি। এভাবেই তাদের সারা জীবন চলে। তারপর তারা হয় কোনো মহামারীর বলীর বখরা হয়,আর না হয় কোনো বড়লোকের উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলের গারিতে চাপা পরে। এরা কারোর কোনো কাজে দখল দেয় না,তবুও সবাই এদের দেখেই তীব্র গালি গালাজ করে। এরা পুরোপুরি নিঃস্ব; সম্বল বলতে পথের ধারের এই ফুটপাথ টুকু। তাই তারা সারা জীবন এই ফুটপাথকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে। এটা ভাবতে খুব লজ্জা করে,যেই পথের ধারটাতে আমরা প্রস্রাব করি,পানের পিক,থুতু ফেলি,সেখানে ওরা খায়,ঘুমায়,বসবাস করে। পুজোর সময় যখন প্যান্ডেল থেকে বেরিয়ে তাদের দেখি পথের ধারে শুয়ে-বসে থাকতে,তখন তাদের চোখে মুখের নিরাশা,নিঃস্বতা যেন এই পুজোর যাকযমক সাজ,আলো,আনন্দকে ঠেলে কয়েক হাজার মাইল দূরে সরিয়ে দেয় কয়েক মুহূর্তের জন্য। আমরা অবশ্য বেশিক্ষণ এই অনুভুতি ধরে রাখতে পারি না,ভদ্রলোক কিনা আমরা! আসলে আমরা বেশিক্ষণ এই অনুভুতি ধরে রাখলে নিজেদের কাছেই ছোট হয়ে যাই। এতদিন আমি এদেরকে শুধু উপর দিয়েই দেখতাম,কিন্তু আজ এদের মধ্যে ঢুকে বুঝলাম এদের অবস্থা। এরা কোথা থেকে এসছে,এই প্রশ্নের উত্তর পাইনি ঠিকই। তবে এরা কেন এখানে পড়ে আছে,এই প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। তবে এই উত্তর প্রকাশ করার মতো ভাষা নেই আমার কাছে,উত্তর পেতে গেলে এদের মধ্যে থাকতে হবে......।