বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

সর্বশিক্ষক বনাম সর্বশিক্ষা - Biswarup Bhattacharyya

সালটা ২০০৮, শুনলাম টিউশন বাবদ নাকি মোট ১৮০০০ টাকা দিতে হবে ৬ মাসে।শুনেই চক্ষু চড়কগাছ হল, তারপর ভাবলাম হয়তো স্কুল থেকে কলেজে উঠেছি তাই টাকার পরিমান বাড়বেই এটাই স্বাভাবিক।তারপর আরও ভাবা, আচ্ছা কলেজেই কি টিউশন পড়াবে, তাহলে তো বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে।পরে বুঝলাম এটা কলেজের একটা ফীস, যেমন স্কুলের ফীস হয় ঠিক সেইরকম। এর মধ্যে আলাদা টিউশন পড়ানোর কোনও বাস্তবতা নেই।কিন্তু হয়তো এই বোধটা তার আগে জন্মালে ভালো হত।কিন্তু বোঝাবে কে? ছোট থেকেই বাচ্চাদের পিঠে বইয়ের বোঝা আর তার সাথে চলে সময়ের খেলা, বোধ আসার জন্যে যে ভাবনার সময় লাগে সেটা তো পাওয়ায় যায় না।সকালে উঠে সাঁতার শেখা, তারপর খেয়ে বস্তা (বইয়ের) বয়ে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, সেখানে যেয়ে হ-য-ব-র-ল শেখা, তারপরে এসে আঁকার টিউশন, তারপর নাচ-গান, সন্ধ্যাতে নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের গৃহশিক্ষক, তারপর ক্লান্ত পথিকের মত একটু জলের আশা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়া।এই হচ্ছে একটা মোটামুটি ৩ বছরের বাচ্চার সময়সূচী।এইভাবে সে যত বড় হয়, চাপ তত বাড়ে।তখন এই বোধটাই হারিয়ে যায়, যেটা আমার সামনে হচ্ছে, সেটা কতটা ঠিক আর কতটা ভুল।অনেকরকম কথা বললাম, এবার আসল কথায় আসা যাক।টিউশনটা জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।তার ফলে ব্যাবসাও চলছে রমরমিয়ে।এখন মোটামুটি একজন মাধ্যামিক পড়ুয়ার ৭ জন গৃহশিক্ষক লাগে।সমস্যাটা হচ্ছে, স্কুলে প্রথম ২ সপ্তাহ বোঝা যায় কি পড়াচ্ছে, কিন্তু তার পরেই আর কিছু বোঝা যায় না।এটা কেন, কারণ একটাই স্কুলের শিক্ষকরাও চান টিউশন পড়িয়ে কিছু রোজগার করতে।এইভাবে টিউশন ব্যাবসা বড় হতে হতে এখন তা বিস্ফরনের রূপ নিয়েছে। এখন নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট কিছু সংস্থা তৈরি হয়েছে, এবং তারা ছাত্রদের সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে প্রায় সকলকেই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। তাহলে সাফল্য যখন আসছে, টিউশন ব্যাবসা তোলার কথা উঠছে কেন? কারণ, টিউশন ব্যাবসা ছাত্রদের রোবট বানিয়ে তুলছে। রোবটের দ্বারা সাফল্য আসছে ঠিকই, কিন্তু তা ঐ পরিবেশে। আমার বিশ্বাস, এই ছাত্ররাই এর থেকে বেশি সাফল্য আনতে পারে শুধু স্কুলে পড়ে, অবশ্য স্কুলে যদি প্রত্যেক শিক্ষক যথাযতভাবে পড়ান তবেই।

এই বড় বড় টিউশন ব্যাবসায় উচ্চবিত্ত লোকেরা উপকৃত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু নিম্নবিত্ত লোকেরা কি করবে? এর জন্যে কেন্দ্রীও সরকারের অশেষ দয়াতে ‘সর্বশিক্ষা’ অভিযান শুরু হল গ্রাম থেকে শহর সব স্কুলেই। কিন্তু শুরু হলে কি হবে, অবস্থা সেই তরিতেই। ‘মাছ প্রচুর ছাড়া হল, কিন্তু জল তো পচা, ভালো মাছও মরবে’। আদতে ঐ নাম সই পর্যন্তই, জ্ঞানের ‘জ্ঞা’ ও শুরু হলনা। এখন এই টিউশন ব্যাবসার উপর ভিত্তি করে অসংখ্য পরিবার বেঁচে আছে, আর এই লেখার সারমর্ম তাদের বিরুদ্ধে, তাই তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। কিন্তু তারাও যদি নিজেদের কথা ভাবে, তাহলে দেখা যাবে, বন্যাস্রোতে তাদের ঘরও ভাঙছে। পার্থক্য শুধু একটাই, কোনটা তাৎক্ষণিক ভাঙ্গন, আর কোনটা সুদীর্ঘ।