পৃথিবী কি আদৌ ধ্বংস হবে! - Biswarup Bhattacharyya
পৃথিবীতে মোট শক্তির পরিমান অপরিবর্তনীয়। শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই। তাই হয়তো যার কাছে এই শক্তি আসে, সে ই এর অপব্যাবহার করতে চায়। কিন্তু শক্তির কি তাহলে সদবাবহার হয় না? না, তথ্যটা ভুল। শক্তির সদব্যাবহারও বহুল ক্ষেত্রে প্রকটভাবে হয়ে থাকে। কিন্তু কোনোভাবে হয়তো শক্তির অপব্যাবহারের পরিমাণটা সদব্যাবহারের থেকে অতিপ্রকট হয়ে আমাদের পরিবেশ ও সমাজের কাছে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে বিভিন্নরুপে।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ তে নাকি আমাদের পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার দিন ছিল, কিন্তু ঐ দিন পৃথিবী ধ্বংস না হওয়ার ফলে একটা প্রশ্ন অনেকেরই মনের মধ্যে দানা বেঁধেছে। তাহলে কি পৃথিবী আর ধ্বংস হবে না? এর বাখ্যা হয়তো অসংখ্য বিজ্ঞানীরা ভালভাবে দিতে পারবেন, কিন্তু আমার মনে হয় অসংখ্য কারণের সমষ্টিগত প্রতিফলনেই পৃথিবী একমাত্র ধ্বংস হতে পারে। সবথেকে বড় কারণ মানুষ নিজেই। মানুষই এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা এবং মানুষই একমাত্র ধ্বংস করতে পারে। দিনের পর দিন মানুষের মধ্যে হিংসা, লোভ, বিদ্বেষ, ক্রোধ, ঘৃণা, বিভেদ, ধর্মবৈষম্য এবং আরও অসংখ্য কারণ আছে, যা ক্রমে ক্রমে বেড়েই চলেছে। প্রতি ক্ষণে এর প্রভাব অসম্ভব হারে বাড়ছে। আর এই সকল জিনিষের প্রতিফলনরূপেই হয়তো পৃথিবী প্রতিনিয়ত ধংসের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন কেউ কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, এগুলোর জন্য পৃথিবী ধ্বংস হবে কিভাবে? একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলেই সকলেই বুঝতে পারবেন, এগুলিই একমাত্র কারণ হতে পারে পৃথিবী ধংসের জন্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে হিন্দু-মুসলমান বিভেদ। এই বিভেদ মানুষই গড়েছে এবং এই বিভেদের জন্য দুই জাতির মধ্যে দাঙ্গা, হানাহানি অতি প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। এইরকম উদাহরণ গোটা পৃথিবীতে অসংখ্য আছে। তাহলে কি এই ধংসে অগ্রসর পৃথিবীকে বাঁচানোর কোনও উপায় নাই? উপায় আছে। উপায়টাও মানুষ নিজেই। ভালোবাসা দিয়েই এই সব কিছু মুছে ফেলা সম্ভব। মানুষের কোনও জাত হয় না। সব মানুষেরই রক্তের রঙ লাল। সব জাত ও সব স্তরের মানুষকে আমরা যেন ভালবাসতে পারি। আর সকলকে ভালবাসতে যদি না ও পারি, তবুও ঘৃণা, বিদ্বেষ- এইসব জিনিষগুলো যেন মনের মধ্যে দানা না বাঁধে। আর এইভাবেই পৃথিবীকে বাঁচানো সম্ভব। পৃথিবী বাঁচলে আমরা বাঁচব, আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাকে সাড়ম্বরে গ্রহন করবে। আমার মনে হয় এইভাবেই এক সুন্দর পৃথিবীর জন্ম আমরা দিতে পারি, যেমনভাবে অতীত পৃথিবীর জন্ম ঘটেছিল। শক্তির অপব্যাবহার নয়, সদব্যাবহার করি, আর সদব্যাবহার করলে তা হয়তো সত্যিকারের শক্তিরুপে একদিন প্রতিষ্ঠা করবেই এক নতুন প্রজন্মের পৃথিবী। তাই আমি বিশ্বযুদ্ধের শান্তি সম্মেলনের সেই বাক্যটা আবার বলতে চাই ‘যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’, নতুন করে বাঁচতে চাই, নতুন পৃথিবী গড়তে চাই।