বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

উদ্ভিদের আর্তনাত - Biswarup Bhattacharyya

জীব মাত্রই জীবন বর্তমান। আমরা প্রাণীরা এই জীবপ্রজাতির একটা অংশমাত্র। ওপর অংশটি হল উদ্ভিদজগৎ। উদ্ভিদের প্রান আছে, এই বাস্তব সত্যের সন্ধান দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু। কিন্তু জীবজগৎ-এর এই অংশটি হয়তো ততটা মর্যাদা পায় না, যতটা প্রাণীজগৎ পেয়ে থাকে। অথচ উদ্ভিদজগৎ-এর জন্যই প্রাণীজগৎ-এর অস্তিত্ব, এই বাস্তব সত্যটা হয়তো মাঝে মাঝেই আমরা মানবজাতি ভুলে যাই। জল না খেয়ে মানুষ তথা প্রাণীজগৎ ১ দিনও বাঁচতে পারবে, এমনকি অনেকে ১ দিনের নির্জলা উপবাসও করে থাকেন, কিন্তু ১ দিন নির্বায়ু উপবাস করার ক্ষমতা প্রাণীজগৎ- এর নেই। তাও উদ্ভিদজগৎ দিনের পর দিন অবহেলিত হয়েই পড়ে আছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, হঠাৎ উদ্ভিদকে নিয়ে এত কথা কেন? হবে না ই বা কেন, যখন স্বয়ং বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এবং তার আশেপাশেও এই অবহেলার ঘটনা ঘটছে, তখন আমরা চুপ করে থাকতে পারি না। আজকাল দেখা যায় একাধিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য বা যেকোনো কারণে সৌন্দর্যায়নের জন্যেও, গাছগুলির নিচের অংশকে সৌন্দর্য প্রদান করার জন্য বিভিন্ন রঙ দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হছে। এইসব প্রতিষ্ঠানে হয়তো এক বা আকাধিকবার বিভিন্ন স্তরের মন্ত্রীরাও আসছেন, কিন্তু কারও এই দিকটার দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কোন সময়ই নেই। এর ফলে হয়তো গাছের সৌন্দর্য বৃব্ধি পাচ্ছে, কিন্তু উদ্ভিদজগৎ-এর যে ক্ষতি হচ্ছে তা নিবারণ করার ক্ষমতা মানবজাতি বা প্রাণীজগৎ- এর নেই। যেকোনো রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান শক্তি হল শিক্ষাক্ষেত্র, আর এই শিক্ষাক্ষেত্রেই হয় সকলের কাছে আদর্শ। কিন্তু খোদ শিক্ষাকেন্দ্রেই যখন এই ঘটনা ঘটছে, তখন আমজনতা কি শিখবে? এছাড়াও একাধিক স্থানকে সৌন্দর্যায়ন করার জন্য এই কাজ চলছে নির্বিচারে, যা এখুনি বন্ধ হওয়া উচিত। এর পরের ঘটনা হল বিজ্ঞাপনদাতাদের অবাধ বিচরন। এই অবাধ বিচরনের স্বীকার হচ্ছে উদ্ভিদজগৎ। যত্রতত্র উদ্ভিদের গায়ে অসংখ্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, কোথাও পেরেক দিয়ে গাছের ওপর ছিদ্র করে, আবার কোথাও বিভিন্ন আঠার সাহায্যে অথবা বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সাহায্যে উদ্ভিদকে ছিদ্র করে এবং অবশ্যই রঙের সাহায্যে তো চলছেই। এছাড়াও অজথা গাছ কাটা, উদ্ভিদের ওপর যত্রতত্র কফ-থুতু ফেলা, এ তো নিত্যসঙ্গী, যা বেশিরভাগ সাধারন মানুষ করেই থাকেন। এছাড়াও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন যায়গায় বৃক্ষরোপণ হলেও তার যথার্থ যত্ন নেওয়া হচ্ছে না। একটা উদাহরণ দিই, কোলকাতার আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড এর ধারে সরকারের পক্ষে কোলকাতা সবুজায়নের জন্য বৃক্ষরোপণ হয়েছিল ২০০৭ সালে, কিন্তু গাছগুলি বড় হয়ে গেলেও অর চারপাশে দেওয়া জালগুলি না খোলার ফলে তা একেবারে গাছের কাণ্ডের সাথে চেপে বসে গেছে, যা প্রভুত ক্ষতি করছে ওই গাছগুলির।

এইভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্বিচারে অত্যাচার চালানো হচ্ছে, যা তথাকথিত শব্দ 'ধর্ষণ'- এর থেকে কম কিছু নয়। পার্থক্য একটাই, মানবজাতির ক্ষেত্রে প্রতিবাদ হয়, কিন্তু উদ্ভিদের ওপর অত্যাচার হলে উদ্ভিদ প্রজাতি প্রতিবাদ করতে পারেনা, তাই কি তার সুযোগ নিয়ে মানবজাতি দিনের পর দিন অত্যাচার করে যাবে নির্বিচারে? যার ফলস্বরূপ একটু একটু করে মানবজাতি স্বয়ং নিজেদের ধংসের পথ সুগম করছে। কিন্তু উদ্ভিদও তার ওপর এই অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি চায়। তার অশ্রুভরা চোখে সে ও আজ বিচার চায় প্রাণীজগৎ এর কাছে। আমরা মানবজাতিরা যদি নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে উদ্ভিদকেও তার প্রকৃত সম্মান দিই, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো 'একটি গাছ একটি প্রান' বাক্যটি যথার্থই মর্যাদা পাবে।