সোশিও-ফোবিয়া - Biswarup Bhattacharyya
সুইচ টিপলেই সব হাতের সামনে, সব সমস্যার সমাধান, যা আস্তে আস্তে টাচ এ পরিনত হচ্ছে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেটস এর কথা বলছি। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেটস এর পদানত হয়ে আছি। এর থেকে বেরনো খুবই কঠিন। এখন আমি এই লেখাটা লিখছি ল্যাপটপ এ, একটা অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেটস এর মধ্যে অন্যতম। এই গ্যাজেটসগুলো আমাদেরকে অনেক কিছু দিলেও, কেড়ে নিয়েছেও অনেক কিছু। আগে আমাদের দূরবর্তী স্থানের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল পত্র বা চিঠি। পরে টেলিফোন, আর এখন তা মোবাইল থেকে স্থানান্তরিত হয়ে পরিনত হয়েছে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ এ। আগে বন্ধু হত সামনাসামনি, এখন তা হয় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে। এর হয়তো সুফল আছে, কিন্তু এটা কি একটা মানুষের আন্তরিকতা অন্য মানুষের আন্তরিকতাকে বোঝাতে সক্ষম? সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইটগুলি কেড়ে নিয়েছে মানুষের জীবনের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করতে চাওয়া মুহূর্তগুলোকে, কেড়ে নিয়েছে সেইসব খেলতে চাওয়া মনগুলোকে, যারা বিকেলবেলা সবকিছুকে উপেক্ষা করে সবুজ ঘাসের বুক চিরে ছুটে বেড়াতো। স্বাভাবিক জনজীবনে কেমন যেন অন্য একটা স্বাদ, ভালো না খারাপ সেটা বলার অধিকার তো সবারই আছে। আজকাল নাকি বন্ধুত্ব হয় ফেসবুক-এ, আবার বন্ধুত্ব ভাঙ্গেও নাকি ফেসবুক-এই। এমনকি এমন ঘটনার সাক্ষীও আছে, যে ভালোবাসাও নাকি ফেসবুক-এই হয়, এটাও নাকি ভাঙ্গে সেই ফেসবুক-এই। ফেসবুক ব্যাবহারকারীর দিক দিয়ে ভারত এখন আমেরিকার ঠিক পরেই দ্বিতীয় স্থানে। অদূর ভবিষ্যতে প্রথম স্থানে যাওয়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। শুধু ফেসবুক বললে একটু ভুল হবে, কারন এখন সবকিছুর সাথে পাল্লা দিচ্ছে টুইটার এবং হোয়াটসঅ্যাপ।
শুধু খারাপ দিকগুলকে তুলে ধরা হয়তো উচিত নয়। যতই হোক, আমাদের দাদু-ঠাকুমারা এর কদর বুঝতে না ও পারে, কিন্তু আমি বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করব এরকম স্বার্থপর আমি নই। যতই হোক, আগে দূরে থাকা কারুর সাথে কথা বলতে চাইলেও তা খুব একটা সম্ভব ছিল না, এখন তা অনায়াসেই করা যায়। শুধু কথা বলাই নয়, চাইলে ভিডিও-কলিং ও করা যায়। দূরদেশে থাকা ছেলে-মেয়েদের সাথে তার বাড়ির লোকজন অনায়াসেই যোগাযোগ করতে পারে নিমেষেই। ভালো গুনগুলোর উপকারিতা যেমন আছে, তেমন খারাপ গুনগুলোর ব্যর্থতা ও আছে। এখন এই প্রশ্নটা উঠতেই পারে, বিজ্ঞানের এই দানের এত ভালো গুন থাকতে, আমি হঠাৎ এর ব্যর্থতা নিয়ে এত বেশি প্রকট হচ্ছি কেন? ব্যর্থতার প্রকটতা কি ভালো গুনগুলোকে স্বপ্নভঙ্গের মত কালরাত্রিতে পরিনত করছে? উত্তর খুঁজলে দেখা যাবে, অসংখ্য প্রজ্বলিত জীবন নিঃশেষ হয়েছে এর ব্যর্থতায়। এর কারন যে বিজ্ঞানের উদ্ভাবনী শক্তি, তা কিন্তু নয়। এর কারন বিজ্ঞানের অপব্যাবহার। ছোটবেলায় বাংলা পরীক্ষায় একটা বাক্যরচনা মাঝেমাঝেই আসতো, “বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ”। তখন বিজ্ঞানের অভিশপ্ত রূপকে ব্যাখ্যা করতে গেলে হিরোশিমা-নাগাসাক র পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ এর উদাহরণ দিতে হত, এখন এই বোমা বোধয় প্রতি বাড়িতেই ফাটছে। কিন্তু এটা পরমাণু বোমা নয়, এটাকে বলা যেতে পারে ‘সোশিও বোমা’।