ছায়া - Devid Blackmist
মন্ত্রীপুত্র শুঙ্গবাহার, এখন হাসছে ।
রাজপুত্র বৃহঃপক্ষ আর সে একদম ছোট্ট বেলার বন্ধু । কত খেলা, কত নতুন দেশ আবিষ্কার কত অভিযান । দুজনের গতি সব সময় ছিল এক সূত্রে বাঁধা । যখন হঠাত করেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল অজানা বিষবাষ্প, খাদ্য সংগ্রহের জন্য বেরিয়ে একের পর এক মারা পড়তে লাগল প্রজারা তখন তারা দুজনেই তো নতুন, নিরাপদ খাদ্যভান্ডারের সন্ধান বের করেছিল অসম সাহসীকতায় । কিন্তু …
জীবনে সব কিছুর যে সাম্য থাকেনা । তাই অসাম্যকে ব্যালেন্স করার জন্য কিন্তুর বাটখারা চাপাতে হয় । যদিও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সুচতুর ব্যবসায়ীর মতই কিন্তুর বাটখারাকে নিশ্চুপে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অন্ধকারে ।
সব দিক থেকে সমান হওয়া সত্ত্বেও বৃহঃপক্ষ আজ হবে রাজা আর শুঙ্গবাহার তার মন্ত্রী, সামান্য বেতনভুক অনুচর । কিন্তু কেন ?
শুঙ্গবাহার হাসছে কারণ বিষমিশ্রিত খাবার অতি সন্তর্পনে সে মিশিয়েছে বন্ধু বৃহঃপক্ষের আহারে । বীর, রাজবংশজাত বৃহঃপক্ষ এখন অচৈতন্য, অসহায় । পুঞ্জীভূত ঘৃণায় মুহুর্মুহু পদাঘাতে বৃহপক্ষঃকে চিরকালের মত শেষ করে দিতে সে দেরী করল না । আঃ কি শান্তি, এবার ??? কে আটকাবে তাকে রাজা হওয়া থেকে ?
ধুপপ …
আচমকা ওপর থেকে নেমে আসা আঘাতে থেঁতলে গেল শুঙ্গবাহারের শরীর ।
**********
আজ সকাল থেকেই যত লাফড়া এসে জমছে । অক্ষয় দারোগার মুখটা শুকনো বেগুনের মত বিকৃত । শালা হুলোটা পারেও বটে । আরে বাবা গুন্ডা গুন্ডার মত থাকবি তোলা ফোলা তুলবি, ঠিক টাইম মত থানায় এসে বখরাটা দিয়ে যাবি, মস্তি করবি … তা না যত্ত উটকো ঝামেলা বাধিয়ে বসে থাকিস । কোথাকার কোন মাগীকে রেপ করে বসে আছে । লাও এবার ঠ্যালা সামলাও । মজা মারানোর বেলায় উনি আর হুজ্জুত ভোগ করবে পুলিশ ।
জুতোটায় একটা চ্যাপটানো আরশোলা লেগে আছে, খানিক্ষণ আগেই মেরেছেন । একটা কাঠি দিয়ে জুতোটা পরিস্কার করতে করতে অক্ষয়বাবু জিজ্ঞেস করলেন, “মেয়েকে ঘরে একা একা রেখে যান কেন ? জানেন না আজকাল এইসব উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা বাবা মা বাড়ি না থাকলেই কলেজের বন্ধু, বয়ফ্রেন্ড বাড়িতে এনে এসব অপকম্ম করে”
প্রায় ষাটোর্ধ বৃদ্ধটি এই শুনে কান্নাভেজা গলায় প্রতিবাদ করে উঠল, ” না না বড়বাবু, আমার মেয়ে ওরকম নয় । ও তো ঘরে বসে পড়াশুনো করছিল । আমি রিটায়ার্ড মানুষ, পার্টটাইমে একটা কাজ না করলে সংসার চলবে কী করে, ওর মা সেলাইয়ের দোকানে কাজটা করে বলে মেয়েটাকে পড়াশোনাটা করাতে পারছি, আমার মেয়ে ওরকম নয় বড়বাবু, বিশ্ব্যাস করেন “
- “হ্যাঁ হ্যাঁ জানি সব সতী … সাবিত্রী । আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে, আপনার মেয়ে কিরকম, যান তো বেশী ঝামেলা করবেন না । এই চৌবে, এর ডাইরিটা লিখে নাও তো । আর শুনুন, এই যে, ঝুটমুট যার তার নামে কমপ্লেন করবেন না । আপনার মেয়ে তো দিব্যি বেঁচে আছে । দিনকাল ভাল নয় । সব জায়গায় তো আর পুলিশ থাকেনা । যা লিখবেন ভেবে চিন্তে লিখবেন ।”
বাড়ি এসে একটু চাট করে মাখা মুড়ি নিয়ে মিরাক্কেল দেখতে বসলেন অক্ষয়বাবু । এমন সময় বেশ সেজে গুজে তিতলি এসে বলল, “বাবা স্কুটিটা নিয়ে বেরোচ্ছি, কাল একটা প্রোজেক্ট জমা দিতে হবে । সানন্দাদের বাড়িতে আজ রাত্রিতে থাকব, কাল ওখান থেকেই কলেজ চলে যাব, বাই, গুড নাইট”
অক্ষয়বাবু একমনে মিরাক্কেল দেখতে দেখতে বললেন “হুঁ হুঁ” ।
রাত্রে খাওয়া দাওয়ার পর একটু হুইস্কি খেলেন অক্ষয়বাবু । ঘুমটাও হল বেশ গভীর ।
“সারে জাঁহাসে আচ্ছা …… ” ফোনটা বাজছে না ??? অত্যন্ত্য বিরক্তির সঙ্গে উঠে বসলেন অক্ষয়বাবু । দূর বাল, সেন্ট্রীগুলোকে এতবার বলা সত্ত্বেও কেন যে রাত্রিবেলা বিরক্ত করে ।
- “হ্যালো কে ?”
- “হ্যালো, অক্ষয়বাবু, আমি সাউথইষ্টের ও সি বলছি, একটু প্রবলেম হয়ে গেছে আপনি এক্ষুনি একবার কাইন্ডলি আমাদের স্টেশনে চলে আসুন, মানে প্রব্লেমটা আপনার মেয়েকে নিয়ে, প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি চলে আসুন”
————————————-
ঝামেলা মিটতে মিটতে প্রায় ভোর হয়ে গেছে, সাউথইষ্ট পুলিশ স্টেশন …
ওসি অক্ষয়বাবুকে বোঝাচ্ছেন, “সরি দাদা, আই অ্যাম ভেরি সরি । আসলে ও বুঝতে পারেনি যে এ আপনার মেয়ে । না বুঝে এরকম অসভ্যতা করে ফেলেছে ।মামণী এখন ভাল আছে, ওর সেরকম কিচ্ছু হয়নি । নার্সিংহোমে ওর কাছে দুজন কনস্টেবলকে রেখে এসেছি । কেউ জানেনি দাদা । আপনি কোন চিন্তা করবেন না । শুধু দাদা একটা কথা । সবই তো বোঝেন, মিনিস্টারের ছেলে । মানে বুঝতেই তো পারছেন আমাদের হাত পা বাঁধা । আই অ্যাম ভেরি সরি দাদা ।”
অক্ষয়বাবু থানা থেকে বেরিয়ে এলেন, তাঁকে ঘিরে ছায়াটা স্পষ্ট হচ্ছে । উপর দিকে তাকালেন অক্ষয়বাবু ।
বুটজুতোটা নেমে আসছে একদম সঠিক নিশানায় …
*** গল্পের সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকাটা অনভিপ্রেত হলেও অস্বাভাবিক নয় । তবে সেরকম কিছু মিল পাওয়া গেলে, মানুষ হিসাবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী ।