বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

ভাসিয়ে দিলাম নৌকা দুটো - দেবমানী সাহা

তখনও বৃষ্টি পড়ছে অবিশ্রান্তভাবে। বইমেলা থেকে ফিরছি আমরা, কোনোমতে বাসের ভিড় ঠেলে উঠতে গিয়ে ভিজে গেছি বেশ খানিকটা, অজয়নগরে নেমে অটোতে উঠব দুজনে, কিন্তু এত জোরে বৃষ্টি পড়ছিল বাস থেকে নেমে কোনোমতে সামনের গাছতলায় গিয়ে দাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। প্রায় পনেরো মিনিট ধরে দাড়িয়ে রইলাম আমরা। বৃষ্টি কমার কোনো লক্ষনই দেখতে পাচ্ছিলাম না। তার মধ্যে হাতে প্যাকেটের বইগুলো ভিজতে শুরু করেছে আস্তে আস্তে। বইগুলো যাতে না ভেজে তার জন্য ব্যাগ থেকে আরও কয়েকটা প্লাস্টিক বের করে ভালো করে মুড়িয়ে নিলাম বইগুলোকে। অনেক বই কিনেছি, কিছু আমার পছন্দের কিছু ওর। বইয়ের পোকা আমরা দুজনেই। দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করলাম অনেকক্ষন। অনেক কথা হচ্ছিল, - জমে থাকা স্মৃতির আড়ালের মুহুর্তগুলো বেরিয়ে আসছিল কোথায় - গল্প করছিলাম ফেলে আসা স্কুলের দিনগুলোকে নিয়ে। যদিও দুজনে একই স্কুলে দুবছর পড়েছি, কিন্তু কখনও কথা বলতাম না। ওই রেজাল্ট বেরোলে নম্বর জিজ্ঞাসার মধ্যেই আলাপের গন্ডীটা সীমাবদ্ধ ছিল। পড়ে ধীরে ধীরে বেড়েছে আলাপচারিতা, কমেছে দুরত্ব, সহজ হয়ে উঠেছে মেলামেশা। স্কুল নিয়ে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ দেখি ওর চোখ যায় রাস্তার পাশের সরু গলিটায় জলভরা রাস্তাগুলোর দিকে। অবাক হয়ে ও তাকিয়েছিল জলে ডুবে যাওয়া ফুটপাথগুলোর প্রতি, দেখছিল পথে জমা ওই অপরিস্কার জলরাশির মাঝে মাঝে ফুটে ওঠা জলতরঙ্গ গুলোর প্রতি। দেখছিল পথে জমা ওই অপরিস্কার জলরাশির মাঝে মাঝে ফুটে ওঠা জলতরঙ্গগুলোকে। তারপর সময়সীমার মধ্যে ওর দিকে তাকিয়ে কতকিছু উপলব্ধি করলাম। ওর সারল্য, ওর স্মৃতির অন্তরালে ভেসে যাওয়া অনুভূতি সবকিছুই যেন কত সুন্দর কত নিস্পাপ। এই ভাবতে ভাবতে যখন হারিয়ে গিয়েছি আমার স্বপ্নপুরীতে, তখন হঠাৎই বাসের হর্নের আওয়াজটা কানে এল, সঙ্গে সঙ্গে ও আমায় বললো ডেকে ব্যাগ থেকে বই কেনার বিলগুলো দিতে। বুঝলাম না হঠাৎ ওর এইসব চাওয়ার কারন। তারপর দেখলাম ও দুটো ছোট্টো ছোট্টো বিলের কাগজ নিয়ে নৌকা বানাল। একটা আমার হাতে দিল আর একটা নিজের হাতে নিল, তারপর দুজনে জমা জলের স্রোতে ভাসিয়ে দিলাম নৌকা দুটো। স্রোতের টানে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে গেল নৌকারা। কাগজের ভেলা দুটোতে ভাসিয়ে দিলাম আমাদের দুজনের ভালোলাগার মুহুর্তগুলোকে, ভাসিয়ে দিলাম সুখ দুঃখের রঙিন মিশেলে জীবনের চরম প্রাপ্তির অনুভূতিগুলোকে। বইমেলার সেই সুখময় স্মৃতি, ফেরার পথে বৃষ্টিস্নাত শহরের রাস্তায় কাগজের নৌকা ভাসানোর অনন্দের অভেদ্যটা আজও যেন স্মৃতিস্তুপের মাঝে উজ্জ্বল হয়ে আছে।