বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

চলো, বেরিয়ে পড়ি। - দেবাশিস বিশ্বাস

এবার শীতকালটা একটু তাড়াতাড়িই চলে এল মফঃস্বলে। সকালে খেয়েদেয়ে জানলার বাইরে নারকেল গাছের পাতায় আলসে রোদ্দুরের খেলা দেখতে দেখতে হঠাৎ মনটা বলে উঠল, "চলো বেরিয়ে পড়ি।" ছেলেবেলা থেকেই চারটে দেওয়ালের বাইরের পৃথিবীটা আমায় টানে বেশি। কিন্তু যাব কোথায়?

ভাবতে ভাবতে অনির কথা মনে পড়ল। আমার ছোটবেলার বন্ধু অনিমেষ। এখন কাঁচরাপাড়ার কাছেই একটা এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি তে পড়াশোনা করে। ওর মুখেই অনেকবার ওখানকার গল্প শুনেছি। খুব সুন্দর জায়গা, মনোরম পরিবেশ, আর অনেকটা বড় জায়গা জুড়ে ওদের ক্যাম্পাস। আজ শনিবার, এখন বাজে সাড়ে দশটা। এখন বেরিয়ে পড়তে পারলে বেশ সুন্দর একটা আউটিং হয়।

যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। অনিমেষকে একটা ফোন করে বেরিয়ে পড়লাম। রাণাঘাট লোকাল ধরে পৌছনো কাঁচরাপাড়ায়। সেখান থেকে বাসে করে কিছুদুর, ফোনেই বলে দিয়েছিল অনি। সেই মত নামলাম। জায়গাটার নাম মোহনপুর। বাসস্টপেই দাড়িয়ে ছিল অনিমেষ। আমাকে দেখেই এক গাল হাসি। সোনালি রোদ্দুরে একটা ফেলে আসা ছোটবেলা দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠল।

পায়ে পায়ে এগিয়ে চললাম ওদের ক্যাম্পাসে। কয়েকপা এগিয়েই বুঝতে পারলাম, অনি এক বর্ণও মিথ্যে বলেনি। সত্যিই ছবির মত সুন্দর জায়গা। গেট পার করে প্রথমেই একটা বড় বাগান। তাতে সব নাম না জানা রঙ বেরঙ্গের গাছ। দেখলে পাতাবাহার মনে হয়। ও কয়েকটা গাছ চিনিয়ে দিল। বিজ্ঞানসম্মত নাম গুলো বেশ খটোমটো। একসাথে সেগুলোকে অর্নামেন্টাল প্লান্টস বলে সেটাও জানা গেল। একসাথে এত পাতাবাহার আগে দেখিনি কখনোও। সবুজ, হলুদ, বেগুনি, লাল যেন রঙের মেলা বসেছে। সেই বাগানের মাঝখানে একটা বড় মূর্তি, ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা তিনিই। এরপর চারিপাশে চোখ বোলাতেই চোখে পড়ল সমস্ত ফ্যাকাল্টি। বাগানটার পেছনেই স্ব-মহিমায় বিরাজমান সেন্ট্রাল লাইব্রেরি। এশিয়ার সব থেকে বড় কৃষি গ্রন্থাগার। চারিপাশ টা ভীষণ সাজানো গোছানো। পাশেই একটা ঘেরা জায়গায় চাষ করা হয়েছে ঔষধি গাছ বা অ্যারোমেটিক প্লান্টস। কিছু চেনা গাছ যেমন লবঙ্গ, অ্যালোভেরা, তুলসি এসব দেখা গেল। বাকি পেপ্যভের স্পিসিস, রুবিয়েসি স্পিসিস, সেন্না অ্যালেক্সেন্ড্রিন এগুলোর নাম অনির মুখ থেকে সোনা। বলাই বাহুল্য, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে চারিপাশে এরকমই সব নমুনা ছরিয়ে থাকবে তাতে আর আশ্চর্য কি?

দুপুর গড়িয়ে তখন বিকাল। পড়ন্ত আলোয় তখন গেলাম ধানক্ষেতে। যতদূর চোখ যায়, মাঠের পর মাঠ সোনালি ফসল ফলে রয়েছে। এসবই ছাত্রছাত্রী দের জন্য। রাস্তার দুপাশে সাজানো রয়েছে ছোট ছোট বাক্স। অনিকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম ওগুলোতে মৌমাছি চাষ হয়। চারপাশটা ভীষণ সবুজ, ফিরতি পথে আরও অনেক গল্প শোনা গেল। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবিষ্কৃত পান এর প্রজাতি, বা উন্নত ফলনশিল পাট, বেশ কিছু ভাল ধানের প্রজাতি। বেশ লাগছিল শুনতে। শেষ দেখা হল হারবেরিয়াম মিউসিয়াম (harberium museum)। কৃত্রিম উপায়ে, কোন গাছের পাতা শুখিয়ে, সেগুলো কে সংরক্ষণ করার এক অভিনব পদ্ধতি। কাছেই  হরিণঘাটা দুগ্ধ প্রকল্প। আর তাই মোহনপুরে খাঁটি দুধ একটা বড় পাওনা।  স্থানীয় একটা মিষ্টি খাওয়া হল, অপূর্ব স্বাদ। সবশেষে ফেরার বাস ধরে, কাঁচরাপাড়া, সেখান থেকে রাণাঘাট।

জীবনের প্রতিটা দিন তো এমনিই কেটে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে একটু অনিয়ম করলে ক্ষতি কি? কিছুটা সময় চুরি করে তো এই একঘেয়েমি কাটিয়েই দেওয়া যায়। যখন মন টা বলে ওঠে, "চলো, বেরিয়ে পড়ি"।