অজানা গন্তব্য - আনিসুজ্জামান সৌরভ
ঠিক ভোর ৫-৩০ এর সময় বিতিকিচ্ছিরি শব্দে অ্যালার্ম ঘড়িটা বেজে উঠলো । প্রতিদিনই এই ঘড়ির ডাকেই ঘুম ভাঙ্গে । ক্লাস আর পার্টটাইম চাকরি শেষে রিফাত মরার মতো ঘুমায় । এতো কর্কশ শব্দ ছাড়া ঘুম ভাঙ্গার কোন উপায় নেই । তবে আজকে ঘড়িটার না বাজলেও চলতো । রিফাত কাল সারারাত জেগেই ছিল । শত চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারে নি । অ্যালার্ম বন্ধ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো সে । ঠান্ডা আবহাওয়া মন শীতল হয়ে যায়। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করলো । কিন্তু লাইটারটা কোথাও খুঁজে পেল না । অন্যদিন হলে খুঁজে দেখত একটু, কিন্তু আজকে আর ইচ্ছে করলো না ।
সিগারেটের প্যাকেটটা পকেটে ঢুকিয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এল সে । অন্যান্য শহরগুলোর মতো এই শহরের লোকজনও আরেকটা যান্ত্রিক দিনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে । শুধু রিফাতেরই আজ কেন যেন রক্ত-মাংসের মানুষ হতে ইচ্ছে করছে । সে রাস্তার পাশের একটা বেঞ্চে বসল , দেখতে লাগলো অন্যদের জীবনগুলোকে । নিজের জীবনের এলোমেলো দিকগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে রিফাত সারাদিন কাটিয়ে দিল । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পথে , তখন সে হেঁটে হেঁটে শহরের একদম শেষপ্রান্তের রেলস্টেশনে এল ।"
প্ল্যাটফর্মের একটা বেঞ্ছিতে বসলো রিফাত । কাজ শেষ করে মানুষজন ঘরে ফিরে আসছে । চোখে-মুখে পরিতিপ্তির পূর্ণ আভাস । স্টেশনটা ধীরে ধীরে নীরব হয়ে যায়। লোক চলাচল একদম কমে আসে । এমন সময় রিফাতের কাছে এক ভিখিরি এসে হাত পাতে । রিফাত কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে ভিখিরিটার দিকে চেয়ে রইল । তারপর পকেট থেকে নিজের মানিব্যাগটা বের করে লোকটার হাতে তুলে দিল । ভিখিরিটার ঘোর কাটার আগেই রিফাত বেঞ্চ ছেড়ে উঠে পড়ল । ধীর পায়ে হেঁটে এসে সে রেল লাইনে নামল । তার বেঁচে থাকা ব্যাপারটা কেমন যেন অর্থহীন মনে হতে লাগল । রেল লাইন ধরে সে হাঁটতে শুরু করলো পরের ট্রেনের অপেক্ষায় । হাঁটতে হাঁটতে সে একটা টানেলের মধ্যে ঢুকে গেল । ঐ তো ট্রেনের ক্ষীণ হুইসেল শোনা যাচ্ছে ।
অনেকদূরে আছে এখনো , কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে । এরপরেই তার দীর্ঘ , ভারি জীবনটাকে আর বইতে হবে না । অসহ্য অনুভূতিগুলোকে সইতে হবে না ,না পাওয়ার কষ্টে আর পুড়তে হবে না। হঠাৎ তার মুঠোফোনটা বেজে উঠলো । জীবনের শেষবেলায় এসে আর কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করল না রিফাতের । তারপরও কি ভেবে যেন পকেট থেকে মুঠোফোনটা বের করল সে । স্ক্রিনে ভাসছে
Maa is calling…………….