তবু ওকে ভালোবাসতে পারি না - দেবমানী সাহা
স্কুলে শেষ বেঞ্চের ধারটায় বসতাম আমরা। খেলার মাঠে ও নামলে চীৎকার করে গলা ফাটাতাম। টিফিন নিয়ে মারামারি, ঝগড়া থেকে শুরু করে স্কুল শেষে বাড়ি ফেরা - সবকিছু ঘিরে ছিল আমাদের চারিদিকের গন্ডিটাতে। তাই আজ আমার চারপাশটাকে ঘিরে রাখা ভালোবাসার মানুষগুলোর ভিড়ে ওকে খুঁজতে চাই। প্রতিমুহুর্তে ওর উপস্থিতটা উপলব্ধি করতে চাই।তবু ওকে ভালবাসতে পারি না। প্রান খুলে ওকে বলতে পারি না আমায় আগলে রাখতে। কাছে গিয়ে আমি নিতে পারিনা ওর স্পর্শের অনুভূতি। দিতে পারি না জীবনের সফরসঙ্গী হওয়ার গভীর প্রতিশ্রুতি। তবু আজও ওর চোখ দিয়েই শহরটাকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে দেখি, ওর চোখ দিয়েই শহর সুন্দরীর সৌন্দর্য উপভোগ করি। উঠতে দেখি, ওর মন দিয়েই রঙিন স্বপ্নের বীজ বুনতে শিখি, ওর হাত ধরেই ভুলতে চেষ্টা করি যন্ত্রনাময় অতীতের জীবন অধ্যায় টাকে।
আজ যখন আমার দেখা স্বপ্নগুলো ওর চোখে বাস্তবতার রূপ পায় তখন ভাবি ভালোবাসা সত্যি সংজ্ঞাহীন। এ এক অনন্য অনুভূতি - যাকে অবাঞ্ছিত শর্তের পরিমন্ডলে বেঁধে রাখা যায় না। যাকে শব্দ বাক্য বিনিময়ে বর্ননা করা যায় না - যা ক্ষনিক আনন্দ সর্বস্বত্বা নয় বরং দীর্ঘ জীবন পথের অমূল্য পাথেয় - যা জ্ঞান সর্বস্ব জীবনের সীমিত আঁধার নয় বরং হ্রদয় অনুভূতির এক ছোট্টো পরিব্যক্তি।
সমস্যাস্কুল জীবনের সূক্ষ্ম মানসিক বিপর্যয়ের দিন গুলোতে যখন ও সবসময় পাশে থাকে, তোলপাড় হয়ে যাওয়া পৃথিবীর এক ছোট্ট নিরাপদ আশ্রয়ে যখন ও আমায় উদ্ধার করে নিয়ে যায়, ফেলে আসা স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে কষ্ট পেলে যখন ও আমায় আগামীর আস্বাদনের আনুভূতি দিতে চায় সর্বতোভাবে, তখন বিশ্বাস করি আমি এক দিন পারবই - পারবই ভবিষ্যতের স্বপ্নময় হাতছানিতে সাড়া দিতে - পারবই একনতুন পৃথিবীতে দিন শুরু করতে - হয়তো বা পারব ওকে ভালোবাসতে