বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

ভাগ্য-রচনা - RATAN MONDAL

ভাগ্য-রচনা –রতন মণ্ডল

একটি আধুনিক ছেলের অতি ছোটগল্প। একদিনের জীবন হলেও তাতে যা ঘটে, তা দিয়ে অনায়াসে একটি উপন্যাস রচনা করে ফেলা যায়।সেখানে এই ছেলেটি পূর্ণ যৌবনের একজন পরিপুষ্ট মানুষ। এই জীবনে পৌঁছানো পর্যন্ত তাঁর যে সংগ্রাম, তারই অতিক্ষুদ্র কয়েকটি কথা দিয়েই এই গল্প। যা দিয়ে অনেকটাই বুঝে নিতে পারা যায় এই আধুনিক ছেলেটির জীবনযাত্রা কতটা আধুনিক এবং সুখপ্রদ।

স্বাভাবিকভাবে যে জিনিসগুলো ছাড়া মানুষের জীবন অতীব দুঃসহ হয়ে পড়ে, সেই বিষয়গুলো তাঁর জীবনে ঠিক কেমন!... তারই একটা ছোট্ট ঝলক।

সবেমাত্র দুর্গাপূজার রেশ কাটছে, তারমধ্যেই এসে পরেছে কালীপূজা,দুদিন পরেই ভাইফোঁটা। তাই বারবার মনটা আনমনা আবেগপ্রবন হয়ে পরছে। কিন্তু কেন!!

তাঁর একটা দিদি আছে, তাঁর থেকে চার বছরের বড়। কিন্তু দিদির স্নেহ কি কোনোদিন বোঝেনি সে, কারন তাঁর দিদি জন্ম থেকেই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। তাই রাখী, ফোঁটা, আদর সেগুলো তো অনেক দূরের কথা। সামান্য "ভাই" ডাকটাও তার মুখ থেকে তার কোনোদিন শোনা হয়নি, আর হবেও না।

 একটা ছোট্ট ফুটফুটে বোন ছিল, তাঁর থেকে চার পাঁচ বছরের ছোট হবে, যে দাদা বলে ডাকত, রাখী পরাত, ফোঁটা দিত, অনেক খুনসুটি পনার মধ্যেও বিরাট স্নেহময় জগত ছিল তাকে নিয়ে। কিন্তু জগতের ঘূর্ণিপাকে ভুল ভাবে বাঁধা পড়ে আত্মহত্যা করে তাকে চিরদিনের জন্য দূরে ঠেলে দিয়েছে, সামান্য সম্বল টুকুও শেষ করে সে এখন অন্য কোনও জগতের বাসিন্দা। 

নিজের দাদা নেই, তাই দাদার স্নেহ আদর ভালবাসাও বোঝা হয়নি তাঁর। যেখানে জীবনের অন্যতম প্রধান চারটা বছর কাটিয়েছে , সেই কলেজেও স্নেহ আদর শব্দটাই যেন একটা অন্য জগতের ন্যাকা ন্যাকা শব্দ বলেই রয়ে গিয়েছিল। মস্তি ছিল,একা ভালো লাগবে না বলে একসাথে ফুর্তি করার একটা সুন্দর মানসিকতাও ছিল, ভালবাসা ব্যাপারটা ছিল গা ভাসানো কিন্তু স্নেহ আদর ছিল না। দাদা ভেবে যাদের অনেক আপন করে নিতে চেয়েছিল, তারাও সুকৌশলে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে, আসলে দাদা, “আপনি বাঁচলে বাপের নাম।” সাহায্য অনেক পেয়েছিল অনেকের থেকে, তার জন্য তাঁর কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই কিন্তু দাদা পায় নি। 

তার কোনও ভাই নেই, নিজে না পাওয়া স্নেহ আদর দিয়ে সেই জায়গাটা পুরন করার জন্য বারবার ভাই করেছে অনেককে। তাদের মধ্যে কেউ স্বার্থসিদ্ধি করে ভেগেছে, কেউ ভুল বুঝে দূরে ঠেলেছে, কেউ আবার নিছকই মন রাখতে নিজেদের ভাই বলে উপস্থাপিত করেছে, কিন্তু তাঁর মনে দাদার যে আবেগ বা ভালবাসা ছিল, সেটার মত কারও মনে সত্যকারের ভাইয়ের আবেগ জাগে নি। বারবার ঠেকেছে, ঠকেছে, কিন্তু এই আশাতেই বারবার পা বাড়িয়েছিল যে একদিন না একদিন নিজের বলে কোনও এক ভাইকে নিশ্চয়ই পাবে। কিন্তু সবই বরাত। নিজের অজান্তে বারবার তাদেরকেই ভাই করেছিল, নিজের স্নেহ আদর যত্ন ভালবাসা সব উজার করে দিয়েছিল, নিজের জীবনের খেয়াল থাকুক বা না থাকুক, ভাইদের জন্য তাঁর ব্যকুলতার শেষ ছিল না, যাদের আসলে ভ্রাতৃস্নেহের দরকার ছিল না। তারা নিজেদের দাদা বা দিদির স্নেহে পরিপূর্ণ ছিল। তাই এঁরটা আর ধরে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি, জায়গায় কুলায়নি, কানা বেয়ে উপছে পড়ে গেছে। আর এ বেচারাও যেন অন্ধ, আগে থেকে কিছুই দেখতে পায়নি।

 কথায় আছে বন্ধু বলে ডাকলেই নাকি তারা ভুলতে পারে না। শুধু নিজের আনন্দের জন্য বন্ধুর জন্য ভাবতে, কাজ করতে ভালবাসত। শোষিত এই সমাজে সে তাদের মত ছিল না যারা স্বার্থ ছাড়া কিছু করে না, কিন্তু বাস্তবে আমরা স্বাভাবিকভাবে মানতে পারি না যে এদের মত দরিদ্র কেউও কোনও ধান্দা ছাড়া কাজ করবে। এই ভেবে কেউ স্বার্থপর ভেবে দূরে ঠেলেছে, আবার অতিচালাক কেউ কেউ তাঁর এই সুন্দর সুযোগের সৎ ব্যবহার করে নিজেদের আঁখের গুছিয়েছে। সে শুধু চেয়েছিল ভালোবেসে কাজ করে যাবে, দরকার হলে তুচ্ছ জীবন উৎসর্গ করবে বন্ধু বা বন্ধুদের জন্য। সে মনে করে বন্ধু আর বন্ধুত্ব নাকি সবার উপরে, তাই যেভাবেই হোক সেই ভালবাসাকে বারবার পেতে চেয়েছে, কোনভাবেই হারাতে চায়নি। কিন্তু ভালবাসার সামান্য সুযোগ টুকু থেকেও তারা বঞ্চিত করেছে ।

 সে তাঁর জীবনে বাবার এমন স্নেহ পেয়েছে যে, কাঁদতে কাঁদতে মনে মনে প্রার্থনা করে কোনও ছেলে মেয়েকে যেন এমন স্নেহ না পেতে হয়, তাতে তারা বেঁচে যাবে।

মা তাঁর কাছে ছিল বন্ধুত্বের আগে শ্রেষ্ঠ স্থান, কিন্তু অনেক অত্যাচারের পরেও সংসার বাঁচানোর সকল ভার নিয়ে তাঁর মাকে বেড়িয়ে পড়তে হয়েছিল জীবিকার সন্ধানে। তাই মায়ের থেকে বরাত জোরে অন্ন টুকুই জুটেছে, এর বেশি কিছু পাবার অবকাশ বিশেষ ছিল না। এখন একটি সন্তান হারানোর পর সেই মায়ের জীবিকা স্তব্ধ হয়েছে। মা চেয়েও পারেনি ছেলে মেয়েদের স্নেহ আদর ভালবাসা উজার করে দিতে, তাই সেটাও প্রায় অধরা ছিল ছেলেটার কাছে।

এখন সে একটাই প্রশ্ন নিজের মনকে করে আর উত্তরের অপেক্ষায় কেঁদে কেঁদে দিন কাটায় যে, মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, দিদি, বন্ধু;

এই সাতসমুদ্র ছাড়া আর এমন কোন জায়গা আছে যেখানে গিয়ে মুক্ত বাতাস পেয়ে প্রান জুড়ানো যায়?

 

এই সপ্তসুর ছাড়া আর কি সুর আছে আছে যা দিয়ে জীবনে বেঁচে থাকার গান তৈরি করা যায়??