বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

‘সিংঘম রিটার্ন্স’ (২০১৪) – পুনরায় সিংহের গর্জন… - Md Anikuzzaman

 

 

 

বলিউডে পুলিশ অফিসার খুব জনপ্রিয় ও লোভনীয় একটা চরিত্র। এ পর্যন্ত 'অমিতাভ বচ্চন', 'ধর্মেন্দ্র', 'ফিরোজ খান', ওম পুরি' থেকে শুরু করে এ জমানার 'আমির খান', 'সালমান খান', 'অক্ষয় কুমার', 'সঞ্জয় দত্ত', 'সানি দেওল', 'বিবেক ওবেরয়', 'শহীদ কাপুর', সহ আরো অনেকেই এ চরিত্রে অভিনয় করেছে, কিন্তু এখন যদি প্রশ্ন ওঠে যে এ সকল অভিনেতাদের মাঝে কে সব থেকে শক্তিশালী পুলিশ অফিসারের চরিত্রটি করেছে এবং পুলিশ অফিসার চরিত্রে সব থেকে সফল অভিনেতা কে ? তবে নিঃসন্দেহে যার নাম সবার প্রথমে আসবে সে হল 'অজয় দেবগন'। 'অজয় দেবগন' খুব বেশী পুলিশ স্টোরী করেনি, কিন্তু যে কয়টি মুভিতে সে পুলিশের রোল প্লে করেছে সেগুলোর গল্প ও তাঁর অভিনয়ই সেরাদের দৌড়ে তাকে প্রথমে রাখার জন্য যথেষ্ট। খুব বেশী দূর যেতে হবে না, 'গঙ্গাজল' ও 'সিংঘাম' এই দুটি মুভিই 'অজয় দেবগন' এর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। 'গঙ্গাজল' ইতিহাস সৃষ্টি করা মুভি হলেও অনেকে বলবেন যে 'সিংঘাম' তো তামিল 'সিংঘাম' এর রিমেক। কিন্তু সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, তামিল 'সিংঘাম' এর অর্ধেক গল্প নিয়ে রোহিত শেঠী তার 'সিংঘাম' নির্মাণ করেছে। 'সিংঘাম' মুভির ক্রেডিট হচ্ছে এর ফিনিশিং যা অন্যান্য টিপিক্যাল পুলিশ স্টোরী থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এক মাত্র 'সিংঘাম' মুভিতেই দেখানো হয়েছে যে পুলিশ চাইলে তাদের ক্ষমতা সঠিক পথে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দূর্নীতি দমন করতে পারে, কারণ একটি রাষ্ট্রে পুলিশের থেকে বড় ক্ষমতা আর কাউকেই দেয়া হয়না। আমার ব্যক্তিগত মতামত অনুযায়ী 'সিংঘাম' মুভিটি পুলিশ একাডেমীতে পাঠ্য হিসেবে দেখানো উচিত।

'সিংঘাম' ১০০ কোটি আয় করার পর রোহিত শেঠী পরিকল্পনা করে এর সিক্যুয়াল তৈরীর। ইতঃমধ্যে 'সালমান খান' তার পুলিশ স্টোরী 'দাবাং' এর সিক্যুয়াল 'দাবাং ২' রিলিজ করে 'চুলবুল পান্ডে'র কারিশমা দেখিয়ে দিয়েছে আবার 'রোহিত শেঠী' 'শাহরুখ খান'কে নিয়ে 'চেন্নাই এক্সপ্রেস' তৈরী করে 'শাহরুখ'কে পৌছে দিয়েছে ২০০ কোটির ক্লাবে। এমন সময় যখন গুজব শোনা গেল যে 'রোহিত' ও 'অজয়' জুটির ফাটল ধরেছে, তখনি তারা দুজন সব গুজবে পানি ঢেলে আধঘাট বেধে নেমে পড়লো 'সিংঘাম ২' তৈরীতে। আধঘাট বাধার কথা বলছি এ কারনে যে 'রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট' এর পাশাপাশি 'অজয়' ও 'রোহিত' পৃথক পৃথক ভাবে নিজ নিজ প্রোডাকশন কোম্পানী 'অজয় দেবগন ফিল্মস' ও 'রোহিত শেঠী প্রোডাকশন' থেকে এ মুভিটি প্রযোজনা করেছে। প্রথম দিকে রোহিত শেঠী বলেছিল যে 'সিংঘাম ২' হবে তামিল 'সিংঘাম ২' এর রিমেক। কিন্তু পরবর্তীতে অরিজিনাল গল্প নিয়ে যাত্রা শুরু হয় 'সিংঘাম রিটার্ন্স' এর। 'দাবাং ২' এর গল্প যেমন এগিয়েছে 'দাবাং' এর পর থেকে, 'সিংঘাম রিটার্ন্স' তার পুরাই ব্যতিক্রম। প্রথম পর্বের সাথে এ পর্বের কোন সংযোগ নেই। প্রথম পর্বের কয়েকটি চরিত্র ছাড়া এ পর্বে সম্পূর্ণ নতুন চরিত্রের আবির্ভাব। প্রথম পর্বের নায়িকা 'কাব্য' এর চরিত্রে ছিল 'কাজল আগারওয়াল' আর এ পর্বে নায়িকা 'আভনি' চরিত্রে আছে 'রোহিত শেঠী'র প্রিয় 'কারিনা কাপুর'। 'আভনি' চরিত্রের জন্য 'রোহিত শেঠী'র প্রথম পছন্দই ছিল 'কারিনা'। কিন্তু 'কারিনা' প্রথমে 'রোহিত'কে না করে দেয়, কারণ গোটা মুভিতে চরিত্রটির ব্যপ্তি খুবই কম ছিল, কিন্তু 'রোহিত' কোন মতেই 'কারিনা'কে হারাতে চায়নি তাই সে গল্প পরিবর্তন করে 'আভনি' চরিত্রের ব্যপ্তি বাড়িয়ে আবার প্রস্তাব দেয় 'কারিনা'কে। এবার আর 'কারিনা' না বলতে পারে না। এ মুভিতে পরিচিত মুখ বলতে শুধু 'বাজিরাও সিংঘাম' এর বাবা 'মানিকরাও সিংঘাম' এর চরিত্রে 'গোবিন্দ নামদেব' এবং 'সিংঘাম' এর সহযোগী ইন্সপেক্টর 'ফাদনিস' এর চরিত্রে 'ভিনিত শর্মা'। তবে এ পর্বে 'সিংঘাম' এর আরেক সহযোগীর চরিত্রে সারপ্রাইজ হিসেবে আছে 'CID' এর 'দায়া' খ্যাত 'দায়ানন্দ শেঠী'। এ মুভিতেও তার চরিত্রের নাম 'ইন্সপেক্টর দায়া' এবং 'CID' এর মত এখানেও তাকে লাথি দিয়ে দরজা ভাংতে দেখা যাবে। 'রোহিত শেঠী' চেয়েছিল এবারের পর্বে কোন গান থাকবে না। গোটা মুভিটি হবে শুধু মাত্র গল্প নির্ভর, তবে পরে এ পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। 'অজয় দেবগন' প্রথম পর্বের মিউজিক ডিরেক্টর 'অজয়-অতুল' এর মিউজিকে মোটেই সন্তুষ্ট ছিল না, তাই সে চেয়েছে এ পর্বের গান গুলো যেন আরো ভাল হয়। তাই, প্রথমে 'হিমেশ রেশামিয়া'র কথা থাকলেও পরে এ মুভিতে মিউজিক দেয় 'অঙ্কিত তিউয়ারী', 'জিৎ গাঙ্গুলী', 'ইয়ো ইয়ো হানি সিং' এবং 'মিত ব্রাদার্স অজ্ঞন'। এ মুভির মোট ৪টি গান কম্পোজ করেছে এই ৪ মিউজিক ডিরেক্টর। 'কুছ তো হুয়া হ্যান' ('অঙ্কিত তিউয়ারী'), 'সিংঘাম থিম' ('মিত ব্রাদার্স অজ্ঞন'), 'আতা মাঝি সাটাকলি' ('ইয়ো ইয়ো হানি সিং') এবং 'সুন লে জারা' ('জিৎ গাঙ্গুলী')। 'সুন লে জারা' গানটির সুর 'জিৎ গাঙ্গুলী' নিয়েছে তার কলকাতা বাংলা মুভি 'বস' এর 'অরিজিৎ সিং' এর গাওয়া 'মন মাঝি রে' গানটি থেকে। 'সুন লে জারা' গানটিও গেয়েছে 'অরিজিৎ সিং'। তবে 'সিংঘাম থিম' গানটি মুভিতে পাওয়া যাবে না। এটি এক্সট্রা হিসেবে অ্যালবামে আছে। আর এদিকে নাকি 'অজয় দেবগন' এর ছেলে 'যুগ দেবগন' 'আতা মাঝি সাটাকলি' গানটি খুব পছন্দ করেছে এবং তাকে ঘরে এ গানের সুরে সুরে প্রায়ই নাঁচতে দেখা যায়।

এ পর্বের গল্পটি সম্পূর্ণ নতুন। এবারের পর্বে দেখা যাবে 'বাজিরাও সিংঘাম' 'DCP' হিসেবে মুম্বাই পুলিশের দ্বায়িত্বে আছে এবং তাকে আবার লড়তে দেখা যাবে এক ভন্ড সাধু ও এক দূর্নীতিবাজ নেতার বিরুদ্ধে। এবং প্রথম পর্বের মতই গল্পের শেষে 'সিংঘাম'কে তার পুলিশী ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করে আইন রক্ষার্থে আইন ভাংতে দেখা যাবে। আর এটাই হল 'বাজিরাও সিংঘাম' এর কাজ করার স্টাইল। প্রথম দিকে গল্প খুব স্লো মোশনে এগিয়েছে এবং ইন্টারভেলের পর থেকে একটু উত্তেজনার দেখা পাওয়া গেছে। তবে প্রথম পর্বের সাথে তুলনা করলে এ পর্বের গল্পটি অনেকটাই দুর্বল, তবে ভেবে দেখার বিষয় হচ্ছে প্রথম পর্বের অর্ধেক গল্প ছিল ধার করা আর এবারের পর্বের পুরো গল্পই অরিজিনাল। অ্যাকশন গুলো বেশ নজর কাড়া এবং পরিমিত পরিমাণে ছিল। বিশেষ করে গোলাগুলির দৃশ্যগুলো খুবই দুর্দান্ত ছিল যা ভিডিও গেম খেলা্র সময় যখন গোলাগুলি করা হয়, ঠিক তেমনি উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে এবং বরাবরের মত এ মুভিতেও অ্যাকশন ডিরেক্টর 'রোহিত শেঠী'র পরিকল্পনায় একটি হলিউড মুভির অ্যাকশন সিন কপি করা হয়েছে। এর আগে 'সিংঘাম' মুভিতে 'রেড' এবং 'চেন্নাই এক্সপ্রেস' এ 'এক্স-মেন অরিজিন্স-উল্ভারিন' মুভির অ্যাকশন সিন কপি করা হয়েছিল আর এবারের পর্বে কপি করা হয়েছে 'মিশন ইম্পসিবল ৩' থেকে। মুভিতে 'কারিনা'র কমেডি টাইমিং ও সিকোয়েন্স গুলো বেশ আনন্দ দিয়েছে। এমন একটি পলিটিক্যাল মুভি একটানা দেখা খুবই কষ্টকর আর সেখানে 'কারিনা কাপুর' বেশ হাস্যরস তৈরী করে দর্শকদের একটু রিলাক্স করেছে আর পাশাপাশি 'অঙ্কিত তিউয়ারী'র গাওয়া 'কুছ তো হুয়া হ্যান' গানটি তো পুরাই দিল ঠান্ডা করে দিয়েছে। 'রোহিত শেঠী' আসলেই জানে কখন দর্শকদের ঠিক কি দরকার। 'অরিজিৎ সিং' এর 'সুন লে জারা' গানটিও একদম সঠিক সময়ে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু 'ইয়ো ইয়ো হানি সিং' 'আতা মাঝি সাটাকলি' গানের পুরাই বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এমন একটি বাজে আর ফালতু গান এমন সিরিয়াস মুভির সাথে কোন ভাবেই যায় না। গোটা মুভির কোন দৃশ্যই অপ্রয়োজনীয় নয়। মুভিতে 'অজয়' এর এন্ট্রি হয়েছে খুব সাদামাটা ভাবে। কোন নায়কোচিত গান ব্যবহার করে সময় নষ্ট করা হয়নি, সরাসরি গল্পে ফোকাস চলে গেছে। মুভিতে বেশ কিছু ইমোশনাল দৃশ্য আছে যা আসলেই দেশের পুলিশ সিস্টেম ও রাজনীতি নিয়ে আমাদের ভাবতে শেখায়। ধর্মের নামে রাজনীতি করার নোংরা প্রবনতাও এ মুভিতে উঠে এসেছে। আর 'অজয় দেবগন' এর বিখ্যাত 'আলি রে আলি, আতা তুঝি ভারি আলি' এবং 'আতা মাঝি সাটাকলি' ডায়লগতো আছেই। তবে মুভির সব থেকে বড় অসঙ্গতি যেটা লেগেছে তা হল, মুম্বাই পুলিশ কি সারা দিন, সারা রাত, এমনকি গোলাগুলির মত ক্রিটিক্যাল টাইমেও চোখে সান-গ্লাস পরে থাকে ? গোটা মুভিতে বিশেষ করে অ্যাকশন সিনে 'অজয় দেবগন' যেভাবে সান-গ্লাস পরে ছিল, তা আসলেই বেশ দৃষ্টিকটু ও অযোক্তিক ছিল।

এ মুভিতে মুম্বাই পুলিশদের দেখা গেছে মুসলমানদের দরগা শরীফে গিয়ে গিলাফ চড়াতে, দোয়া করতে এবং 'অজয়' এর মুখে মুম্বাই পুলিশের সাথে উক্ত দরগা শরীফের সম্পর্ক নিয়ে একটি গল্পও শোনা গেছে, এটা আদৌও সত্যি কিনা তা আমার জানা নেই, তবে হিন্দু পুলিশদের দরগা শরীফে গিয়ে দোয়া চাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। আজকাল বলিউডের মুভিতে নায়ক নায়িকা যে আসলে কোন ধর্মের সেটা বোঝাই দায়। তাদের মন্দির, গীর্জা, দরগা সব খানেই দেখা যায়। বিয়ে করতে দেখা যায় গীর্জায়। ধর্ম নিয়ে এসব স্টাইল আসলেই খুব নিন্দনীয়।

'সিংঘাম রিটার্ন্স' এর ট্রেলারে কিছু সিন আছে যেমন মুম্বাই পুলিশদের দেখা যায় দরগা শরীফে সিজদা দিতে এবং বাহিরে বের হয়ে এসে 'অজয়'কে দেখা যায় দরগাকে স্যালুট করতে। এই দৃশ্য নিয়ে এক হিন্দু সংগঠন কেস করে দেয়ায় মুভি থেকে দৃশ্যগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। তাদের ভাষ্য মতে মুম্বাই পুলিশ এক হিন্দু সাধুকে অপমান ও মুসলমানদের দরগাকে সম্মান দেখিয়েছে যা নাকি তাদের ধর্মীয় মুল্যবোধে আঘাত হেনেছে। অথচ মুভির গল্প অনুযায়ী ওই হিন্দু সাধু 'অমল গুপ্তে' ছিল এক ভন্ড ও দুর্নীতিপরায়ন রাজনীতিবিদ এবং মুভির প্রধাণ ভিলেন। 'সিংঘাম রিটার্ন্স' এ কেটে দেয়া ওই দৃশ্য দুটি সংযুক্ত থাকলে মুভির আবেদন আরো বেড়ে যেত। আফসোস…

অবশেষে, হলিউডের 'সিলভেস্টার স্ট্যালন' 'সিংঘাম রিটার্ন্স' মুভিকে খেতাব দিয়েছে 'ইন্ডিয়ান র‍্যাম্বো' বলে। এটা আসলেই অনেক বড় একটা পাওয়া। আর বক্স অফিস রিপোর্ট অনুযায়ী, 'সিংঘাম রিটার্ন্স' প্রথম দিনে রেকর্ড সংখ্যক ৩২.৫৩ কোটি আয় করে 'কিক', 'চেন্নাই এক্সপ্রেস', 'ধুম ৩' এর প্রথম দিনের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। আশা করা যায়, 'সিংঘাম রিটার্ন্স' খুব জলদিই আরো অনেক রেকর্ড ভাংবে। 'অজয় দেবগন' যে আসলেই বলিউডের 'ডার্ক হর্স' এবং 'খান', 'রোশন', 'কুমার' ও 'কাপুর' দের ভিড়ে এক মাত্র তান্ডব সৃৃষ্টিকারী অভিনেতা সেটা সে আবার প্রমাণ করলো…