ফিরে তাকাবো না আর (প্রথম পর্ব) - অরিজিত শীল
কিছু গল্প, গল্প হলেও সত্যি। যার বাস্তবিক আর সামাজিক কিছু মানে থেকে যায়ে। যেটা খুব সাধারন কিন্তু অনেক সময় সেটা মনের মাঝে দাগ কেটে যায়ে। এমনি একটা ঘটনা লিপিবদ্ধ করে অনেকটাই স্বস্তি পাচ্ছি বলতে পারি। আশা করতে পারি চরিত্র গুল প্রান পাবে পাঠকদের সুদক্ষ কল্পনাশক্তির মাঝে।।
গল্পের শুরু একটা সাধারন মধ্যবর্তী ঘরের ছেলে অবিনাস বসাক – কে দিয়ে। বিগত ১৭ বছর তার জীবনটা বেশ ভালই কাটছিল তার একমাত্র আপনজন তার মা ও বাবার সাথে। হাইয়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দেবে অবিনাস। প্রেপারেসন বেশ ভাল। হটাত ইন্টারনেট-এ চ্যটিঙ করতে করতে একটি মেয়ের সাথে আলাপ হল নাম হল প্রিয়াঙ্কা রায়। শ্যামবর্ণ, মিশুকে এবং খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। উফ! কি বক বকই না করে মেয়েটা। বেশিদিন লাগল না মেয়েটা খুব আপন হয়ে গেল অবিনাস এর। ছোট ছোট গোপন কথা শেয়ার করলো একে অপরে। বেশ ভাল লাগছিল আর ভাল কাটছিল দিনগুলো। বেশ নির্ভরশীল হয়ে পরেছিল অবিনাস প্রিয়াঙ্কার উপর।
একদিন সকালে অবিনাস ভাবল এইবার সেইদিন এসে গেছে আজ দুপুরে ইন্টারনেটে প্রিয়াঙ্কা এলে ওর থেকে ওর ফোন নামারটা চাইবে। দেখা যাক দেয় না কি?
এর আগে নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে অবিনাসের বাড়িতে কে কে থাকে? আর অবিনাসের ছোটবেলা কেন তার বন্ধু ছিল না কেন তার ১৭ টা বছর শুধু তার বাবা ও মা-ই কেন তার আপনজন ছিল? সব প্রশ্নের উত্তর তার লেখা ডায়েরির মধ্যে থেকে পাওয়া যাবে। তার ডায়েরির সারাংশ করা যাক।\
অবিনাস হল এক বর্ধিষ্ণু পরিবারের একজন বংশ প্রদিপ। তার প্রপিতামহ এবং পিতামহ সবাই ছিলেন খুব নামকরা ব্যবসায়ী। উনবিংশ শতাব্দীতে যখন ভারতে শিল্পবিপ্লব চলছিল তখন অবিনাসের প্রপিতামহের পিতামহ একটি অনেক বড় ছাপাখানার শিলান্যাস করেছিল। জার্মান থেকে দামী এবং বড় বড় ছাপার মেশিন আনিয়ে ছিল শরতনাথ বসাক (অবিনাসের প্রপিতামহের পিতামহ)। অনেক লোক নকশাল ছেরে বেচে থাকার জন্য এই ছাপাখানাতে মজুর হিসাবে আবার কেউ কেউ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যোগদান করেছিল। শ্যামবাজারের সবথেকে বড় ছাপাখানা ছিল শরতনাথের তৈরি এই ছাপাখানা। তাই আন্দাজ করা যেতে পারে কত প্রতিপত্তি ছিল ওদের। একান্নবর্তী পরিবার ছিল ওদের। অবিনাশ এর বাবা অবিনাশ এর জেঠুদের থেকে বেশি পড়াশুনা করেছিলেন তাই অবিনাশের ঠাকুরদা অবিনাশ এর বাবাকে পুরো ব্যবসায়ের প্রধান করেছিল। কিন্তু একান্নবর্তী পরিবারে তখন ভাঙ্গন ধরে গেছিল। জেঠুরা মানতে পারিনি তার ছোট ভাই তাদের উপর হুকুম চালাবে তারা কোন মতে মেনে নিতে পারিনি তাদের পূজনীয় বাবার এই সিধান্তটাকে। রেষারেষি সুরু হল ফলে ব্যবসাটা আর বেশিদিন চলল না। অবিনাশ এর বাবা নিজে হাতে তাদের পরিবারের অতি প্রাচীন একটা ব্যবসা বন্ধ করে দিল। দীর্ঘ আটমাস অবিনাশ আর অবিনাশের পরিবার এক অকথ্য নরক যন্ত্রনা এর মাঝে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল। অবিনাশের বাবা ভাল চাকরি পেলে তাদের কষ্টের দিন মিটে যায়ে।
অবিনাশের ডায়েরিতে এইরকম অনেক ঘটনা আছে যার অনেক অন্তর্নিহিত মানে আছে। এটা ছিল সেইগুলোর মধ্যে একটা। অনেক অধ্যায়ের মাঝে যোগ হল প্রিয়াঙ্কার অধ্যায়। তো অবষশেষে অবিনাস প্রিয়াঙ্কার ফোন নাম্বার নিল।
১ম দিনঃ
দুপুরে মিশকল দিল প্রিয়াঙ্কাকে। প্রিয়াঙ্কা এসএমএস করল “ কে আপনি? ‘। এসএমএস টা পেয়ে অবিনাশের এত আনন্দ হল যে ওর মনে হল ও এখন সপ্তম স্বর্গে আছে। অনেক্টা দেরি করে রেপ্লাই দিল “ প্রিয়াঙ্কা আমি অবিনাস।” প্রিয়াঙ্কা বলল “ ও আছা। তোমার সাথে পরে কথা বলছি। আমি একটু ব্যস্ত আছি।“ অবিনাশ কিছু বলল না কিন্তু মনে মনে ওর খুবই খারাপ লাগল। সেইদিন পরতে বসেও পরাতে মন বসেনি অবিনাসের। প্রিয়াঙ্কার কথাই ভেবে গেল সারাক্ষণ। অবিনাশের বন্ধুত্তের প্রথমদিনটা খারাপই গেল।
২য় দিনঃ
পরদিন সকালে যথারীতি রোজকার মত পরতে গেল অবিনাশ। হটাত করে ফোন বেজে উঠল আর ফোনটা ছিল প্রিয়াঙ্কার। ফোনটা কেটে দিল অবিনাস। কিছুক্ষণ পরে কোচিং থেকে বেরিয়ে ফোন করল প্রিয়াঙ্কাকে। ফোন এর ওপার থেকে প্রিয়াঙ্কার আওয়াজ শুনে অবিনাস অনেকটাই মোহময় হয়ে গেল অনেক্ষন পর মুখ থেকে কথা বেরল, বলল, “হ্যাঁ বল।“
প্রিয়াঙ্কা বলল, “ কি খবর? রাগ করনি তো সেইদিন ফোনটা কেটে দিলাম বলে?”
অবিনাস, “ না। আমি এত ছোট বেপারে রাগ করিনা।“
প্রিয়াঙ্কা, “ বা বা। খুব রাগি রাগি শোনাছে।“
অবিনাশ বলল, “ না না বল।“
এরপর প্রিয়াঙ্কার সাথে সেইদিন প্রায় ১ঘণ্টা কথা বলেছে অবিনাশ। ছাড়ার সময় অবিনাশ বলেছিল কাল থেকে এসএমএস কর তাহলে অনেখন কথা বলা যাবে। প্রিয়াঙ্কাও রাজি হয়ে গেল।
৩য় দিনঃ
আজ সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে প্রিয়াঙ্কার সুন্দর একটা প্রাতঃ কালিন এসএমএস এল অবিনাশের মোবাইলে।
এসএমএস টা ছিলঃ-
“ফ্রেন্ড মানে ক্লাস পালিয়ে ভিক্টোরিয়া যাওয়া।
ফ্রেন্ড মানে যখন তখন ধাবায়ে গিয়ে খাওয়া।।
ফ্রেন্ড মানে সকাল সাঝে হটাত মিসড কল,
সুযোগ পেলে লিখে পাঠানো কি করছিস বল?
-গুড মর্নিং।“
অবিনাশ এসএমএস টা পরে খুব খুশি হল আর লিখে পাঠাল গুড মর্নিং। প্রিয়াঙ্কা বলল, “ বুদ্ধুরাম। একটু ভাল মেসসজ পাঠাতে হয়ে।“
এই দুষ্টুমিষ্টি কথাটা শুনে প্রথম অবিনাশ কিরকম যেন অনুভব করল। আজ সারাদিন প্রায়ে এসএমএস এই দিনটা কাটল। অনেকটাই কাছে এসে গেছিল প্রিয়াঙ্কা অবিনাশের।
এই ভাবে না না রকম কথার মাঝে প্রায়ে ১মাস কেটে গেল। প্রিয়াঙ্কা ৩মাস এর জন্য দিল্লি গেল একটা কোর্স করতে। তাই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এ বেশি কথা হত। অবিনাশ যেন প্রিয়াঙ্কাকে নিজের থেকে অনেকটা দুরে অনুভব করছিল। একদিন সেই কথা প্রিয়াঙ্কাকে জানাল সে। প্রিয়াঙ্কা বলল, “ আরে এখানে পরার চাপটা এত বেশি যে সময় হচ্ছেনারে। আর তার উপর এই শুভাশিসটা পাগল করে দিচ্ছে।“ “শুভাশিস? সেটা কে আবার ?” অবিনাশ জিজ্ঞেস করল।