বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

আন্তর্জাতিকতাবাদের গন্ধ... - Souparno Adhikary

মার্কিন মুলুকের দিন বেশ আরামেই কাটছে...

 

ক্রেনশ' ড্রাইভের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে পাশের বন্ধ কাঁচের জানলার ভেনেসিয়ান ব্লাইন্ডসের মধ্যে দিয়ে যতদূর চোখ যায় সবুজ গাছপালা, তার মধ্যে দিয়ে ফালি ফালি হলুদ-সাদায় দাগানো রাস্তা, মাঝে মাঝে ৬০মাইল গতিতে ছুটে যাওয়া ফোর্ড, শেভ্রলে, মার্সেডিজ...

 

তথাকথিত "সব পেয়েছির দেশে" এসে বাসে করে শহর ঘুরছি বললে লোকজন কি অর্ধচন্দ্রটাও ক্যুরিয়ার করে দেবে??? (অর্ধচন্দ্রর মানে না বুঝলে দয়া করে সংসদ বাঙ্গালা অভিধান দ্রষ্টব্য)...

 

গন্তব্য ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির মলিকিউলার বায়োফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট (অর্থাৎ, যেথা মোর কাম করতে আসা)... কো-অর্ডিনেটর লিন কিট্‌ল, ডিরেক্টর হং লি এবং ব্যাঙ্কের চেরিশ হিল্টনের দৌলতে আইডেন্টিটি কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং বৈষয়িক কাজকর্ম যথেষ্ট নির্মেদভাবে মিটলো অযথা হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ, হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ, হাত কচলানো ছাড়াই...

 

একুশ শতকের মানুষ, মোবাইল ফোন ছাড়া জীবন আটকে যায়... অতএব বিকেল (দুপুরই বলা যায়, অন্ধকার হতে শুরু করে "সন্ধে" ৭টার পর) ৪টে নাগাদ গন্তব্য Best Buy এর ডিপার্টমেন্টাল স্টোর...

 

অ্যাপালাশি পার্কওয়ে যাবার জন্য ধরেছিলাম C বাস... অর্চিষ্মানদা আর আমি... লম্বা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসের শেষ সিটে গিয়ে বসে বসে রাস্তার দু'ধারের শোভা অতীব মনোযোগ সহকারে নিরীক্ষণ করছিলাম... (আহা হা হা হা... ফ্রয়েড সর্বত্রই বিরাজমান... ভিন্ন ভিন্ন রূপে)...

 

নতুন দেশ... বাস টার্মিনাসে এসে পাক খাবার সময়ে (এদেশে বাস টার্মিনাসে দাঁড়ায় না, পাক খেয়ে বেরিয়ে যায়) সামনে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে মোটামুটি ১০ মিনিট ট্র্যাফিক জ্যাম... কৃষ্ণাঙ্গ বিপুলায়তন চালক সপ্রতিভভাবে বাস থেকে নেমে চোখে সানগ্লাস চাপিয়ে পাশের টার্মিনাসের বেঞ্চের মোটামুটি ৭৫% দখল করে পা চাপিয়ে নিদ্রা গেলেন...

 

কি আর করা, অগত্যা বাসের সিটের চারপাশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করায় মনোনিবেশ করলাম...

 

সিটের পাশে দেখলাম একটা বেশ ভালো দেখতে হাতল আছে... নামাবার জন্য টান মারতেই জুরাসিক পার্ক ২... গোড়া থেকে উপড়ে হাতে চলে এল... হাতলটার গোড়া কে বা কারা বহুকাল আগেই উপড়ে দিয়ে সযত্নে চ্যুইং গাম দিয়ে আটকে রেখেছিল...

 

কেনাকাটা এবং বাড়ির বাড়ন্ত ভাঁড়ারের জন্য কিছু জিনিসপত্র কিনে বাড়ি ফেরার আগে দুজনেরই মাথায় চাপলো খেয়ে ফেরার আইডিয়া... অতএব মেক্সিকান খাদ্য গলাধঃকরণ করে হাঁটা নাইট বাস ধরার জন্য (হ্যারি পটার ভক্তরা এক্ষুনি লাফালাফি করবেন, হ্যাঁ, এখানে নাইট বাস চলে, আমাদের বাসের নম্বর ছিল N4) স্টার মেট্রো বাস স্টপের দিকে হাঁটা...

 

আকাশে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কেউ... আর সেই আদিগন্তবিস্তৃত ব্লাস্ট ফার্নেসের মধ্যে থেকে উঠে আসছে লেনে সাজানো সার সার নিসান, ফোর্ড, শেভ্রলে, হন্ডার লোহার টুকরো...

 

হঠাৎ বৃষ্টি!!! মেঘ রাগের বিস্তারের মত ছড়িয়ে দিচ্ছে কেউ আকাশ থেকে আটলান্টিকের জমা দুঃখের কণা...

 

বায়োকেমিস্ট্রির ছাত্র হিসেবে জেনেছিলাম জিওসমিনের নাম (Geosmin)... ঠিক কলকাতার মতই সারা দিনের গরম পিচের রাস্তা থেকে উঠে আসা বৃষ্টির ওম আঁকড়ে ধরতে থাকলো...

 

সোঁদা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে কলকাতার অন্য ভৌগোলিক গোলার্ধের এক শহরে...

 

সন্ধে নামছে ভেজা গাছের ওপর, ঝিঁঝির ডাক নিয়ে...