বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

লেকটাউন থেকে গাজা স্ট্রিপ (দিল্লি হয়ে) - Souparno Adhikary

-"ইস্‌, ছি ছি, ওইটুকু দুধের শিশুকে কেউ এরকমভাবে মারে???"

-"আজকালকার মেয়েরা রাস্তায় ওরকম জামাকাপড় পরে বেরোলে তো বিপদ ডেকে আনবেই..."

-"গাজায় সন্ত্রাসবাদীদের ওপর বোম ফেললে কিছু তো মরবেই, সব দেশেরই তো আত্মরক্ষার অধিকার আছে"...


বিশ্বাস করুন!!! তিনটে কথা একই ব্যক্তির বলা... লেকটাউনের শিশু বংশ আগরওয়ালের কেসে যিনি মিডিয়ার ক্লিপিংস দেখে ছি ছি করছেন, তিনিই আবার দ্বিতীয় জ্ঞানটাও দিচ্ছেন... যেন দোষটা মেয়েদের, যে অপরাধ করছে, তার নয়... আবার, গাজায় বাচ্চার মাথা ফেটে ঘিলু বেরিয়ে যাক, আমার বাচ্চা তো দুধ-কর্নফ্লেক্স খেয়ে স্কুলে যাচ্ছে, কাজেই ওরা জঙ্গি- মরুক গে!!!


মিডিয়া ঝিলিকের মা কে বোধহয় এখনো খুঁজে যাচ্ছে... নাহলে সানিয়া মির্জাকে কে "পাকিস্তানের পুত্রবধূ" বলেছে, সেই নিয়ে লাফালাফি করে যাচ্ছে... (স্যালুট সানিয়া!!! যোগ্য জবাব দিয়েছেন... "তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মিডিয়া রাজনীতিকরা বাড়াবাড়ি করছেন"... প্রতিটি কথা যুক্তিযুক্ত...)

 

বংশ আগরওয়ালের টিউটর পূজা সিং ঠিক যতটা অপরাধী, বাবা-মা সঞ্জয় এবং শালিনী আগরওয়ালও ঠিক ততটাই অপরাধ করেছেন... ৫ বছর বয়েসের আগে কোনো শিশুরই মস্তিষ্কের এতটা বিকাশ ঘটে না, যে তাকে প্রাইভেট টিউটর রেখে পড়াতে হবে...

পয়েন্টে আসুন, এখনো চারপাশে অনেক বাবা-মা কেই দেখি অমুকের ছেলে (ক্লাস ১ বা ২) ৮০ পেয়েছে অঙ্কে, তুই কেন ৭৮ পেলি এবং তৎসহ অর্ধচন্দ্র (বাংলা ভাষায় আড়ংধোলাই)...

স্প্যানিশ বুলফাইট মনে করে দেখুন... মোষটাকে ক্রমাগত খুঁচিয়ে, বিরক্ত করে খ্যাপানো হয়, যাতে সে গ্ল্যাডিয়েটরের প্রাণঘাতী হয়ে তেড়ে আসে... এবং তখন আবার তাকে গ্ল্যাডিয়েটরের ছোরায় প্রাণ দিতে হয়... কখনো মৃত্যু হয় গ্ল্যাডিয়েটরের, কিন্তু তাতেও মোষটার প্রাণ বাঁচে না...

ইঞ্জিরিতে যাদের Toddler বলে (বাংলায় শিশু শব্দটা ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত হয় বলে ব্যবহার করলাম না), তাদের অবস্থাটা খানিক এই মোষের মত...

সুমনের গানটা মনে পড়ে যায় ফের... "সকালবেলার রোদ্দুর"...

প্রথম থেকেই চাপ দিয়ে পড়াতে হবে, বাস্তববিমুখ, সমাজবিচ্ছিন্ন, কেরিয়ারিস্ট, পণ্যসর্বস্ব জীবনে তাকে চেপে ঢুকিয়ে দিতে হবে- সমাজের দাবি... কারণ, তাকে সমাজকে চেনালে, অন্যের জন্য ভাবা শেখালে, প্রকৃতি, গান, ছবি, গল্পের বই উপভোগ করতে শেখালে বিপদটা উৎপাদন ব্যবস্থাকে যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের...

"এরা যত বেশি পড়ে/ তত বেশি জানে/ তত কম মানে"...

তাই চেতন ভগত এখনো ভারতবর্ষে বেস্ট সেলার লেখক হন... অরিন্দম চৌধুরী পাতা জোড়া IIPM এর বিজ্ঞাপন দিতে সাহস করেন...

দিল্লি ধর্ষণকাণ্ডের পর বেশ কিছুটা সময় কেটে গেছে... আরো কয়েক বছর হয়তো ভ্রূ কুঁচকে বলবে লোকজন, "নির্ভয়া??? সে কে বলুন তো!!!"

আইএসআই-আল কায়েদা এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো শুনেছি নির্যাতন করে করে মনুষ্যোচিত গুণগুলো নষ্ট করে দেয়... একই জিনিস কি হচ্ছে না শিশুদের ক্ষেত্রেও???

যৌথ পরিবারে একটা শিশুর যতগুলো আশ্রয় থাকে, যতগুলো নিজেকে প্রকাশের জায়গা থাকে- তিনজনের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে ততটাই থাকে???

স্কুলগুলোতে শুনেছি শারীরিক শাস্তি দেওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে... ক্লাস সিক্সেও মনে পরে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য টিচার্স রুমের সামনে নিল ডাউন হয়ে বসে থাকতে হয়েছিল... কেন??? যুক্তিযুক্ত শাস্তি??? (বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি হতর যুক্তি দয়া করে দেবেন না, যে ভিজছে, এটা সে সবথেকে ভালো বোঝে)

জীবনবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক, নাম করবো না, ক্লাস সেভেনে পড়া না পারলে মাথা নিচু করিয়ে পিঠে মারতেন... লাগতো... কিন্তু প্রয়োজন ছিল কি???

শিক্ষার জন্য দরকার... বলুন??? গাজা স্ট্রিপে কয়েকটা বাচ্চা না মরলে (তাতে আমার কি??? আমার বাচ্চা ম্যাকডোনাল্ডসে খাচ্ছে তো) উগ্রপন্থীগুলো শিক্ষা পাবে না... বলুন???

ওপরের তিনটে প্রশ্নই তিনটে সমস্যা... একই দিকে পয়েন্ট করে... একই সুতোয় গাঁথা... অনুভূতিহীন মানুষের কাছে স্বাভাবিক, আমাদের মত "ন্যাকা"দের কাছে অস্বাভাবিক, সামাজিক সমস্যা...

পরের দিন বাচ্চাকে ঘাড় ধরে টিউটরের কাছে নিয়ে যাবার আগে ভাবুন... ভালো করে...