বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

এক গ্লাস জল দেবে ? - ANKUR KUNDU

       অধিকাংশ দুখী গল্পের প্লট যেমন ‘খুঁচিয়ে দুঃখ দেওয়া’ হয় , ঠিক তেমনই সঞ্জীবের জীবনের ভিত্তিটাও তাই ৷ একটা গরীব সংসার , নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা , বাবা দিন-মজুর , মা পরের বাড়ির ঝি ৷ সব ঠিকঠাক ছিল একটা দুখী গল্পের মত , কিন্তু সমস্যা দুটি ক্ষেত্রে ৷ এক , সঞ্জীবকে ওর মা-বাবা খুব ভালোবাসে , কোনোদিন তার গা-এ হাত তোলেনি তারা , যা একটা অভাবের সংসারে বড়োই বেমানান ৷ দুই , সঞ্জীব ভালো ফুটবলার এবং অর্থাভাব সঞ্জীবের ‘ফুট’ ও ‘বল’-এ এতদিন একবারও হামল করতে পারেনি ৷ তবে . . . ধার করে বা না করে সঞ্জীবের বাবা সঞ্জীবকে খেলার সমস্ত সরঞ্জাম কিনে দিয়েছে ৷

 

       বিছানায় শুয়ে সঞ্জীব ভাবছে যে পরশু বরাত জোরে প্রাণটাকে নিজের বাঁচিয়েছে ৷ মা চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে , তাই মা-কে এখনও বকা হয়নি ৷ বাড়ির গরুটা অসুস্থ ছিল ৷ তাই সঞ্জীবের জন্য দুধটা ওর মা কিছু দূরে একটা বাড়ি থেকে আনতে গিয়েছিল ৷ ফেরার পথে রাস্তা পার হতে গিয়ে হঠাৎই দেখে একটা গাড়ি প্রায় তার কাছে চলে এসেছে ৷ সঞ্জীব রাস্তাতেই ছিল ৷ সে ঘটনাটি দেখতে পেয়ে মা-কে রাস্তার ধরে ঠেলে দেয় ৷ সঞ্জীব নিজে যদিওবা আঘাত পেয়েছে ৷ মা ঘুম থেকে উঠলে সে মা-কে বকবেই ৷ ছোটবেলায় মা-এর কাছে সঞ্জীব বকা খেত অসাবধানতার জন্য ৷ এখন সঞ্জীবের বয়স আঠারো ৷ এবার সে-ও বকবে ৷

 

       ছোটবেলায় সঞ্জীবের যখন জ্বর হত , ওর মা মাথার পাশে বসে সেবা করে যেত ; কখনও জলপট্টি , কখনও আবর কয়েকটি বড়ি ৷ আজও সেই একইভাবে মা বসে আছে , তবে ঘুমিয়ে পড়েছে ৷ গতকাল মা সারারাত জেগে ছিল নিশ্চয় ! বাবা নেই , ওষুধ আনতে গিয়েছে বোধহয় ! সঞ্জীবের একটু আনন্দ হচ্ছে ৷ কারণ , ঘরের খটখটে তক্তার বদলে গ্রামের হাসপাতালের নরম বিছানায় ও কয়েকদিন শুতে পারবে ৷ পরশুর অ্যাক্সিডেন্টে আঘাত পেয়ে সে এখন হাসপাতালে ৷ অপারেশনের পরে হাঁটুর নীচ থেকে বাদ পড়েছে সঞ্জীবের দুটো পা ও সখের ফুটবল খেলা ৷ টানা দশ ঘন্টা ঘুমানোর পরে এবার ওর তেষ্টা পেয়েছে খুব ! বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ৷ মা-র চোখের নীচে শুকানো কান্নার ছাপ পরিষ্কার ৷ ব্যথায় কাতর সঞ্জীবের গলা থেকে ‘এক গ্লাস জল দেবে’ অনিচ্ছার স্বর ভেসে এল ৷ মা শুনতে পায়নি ৷ ব্যথাটা ক্রমশঃ বাড়ছে ৷ ‘আ . . . হ্’ ! “আঠারো বছর বয়স ভয়ঙ্কর তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা” ৷