এক গ্লাস জল দেবে ? - ANKUR KUNDU
অধিকাংশ দুখী গল্পের প্লট যেমন ‘খুঁচিয়ে দুঃখ দেওয়া’ হয় , ঠিক তেমনই সঞ্জীবের জীবনের ভিত্তিটাও তাই ৷ একটা গরীব সংসার , নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা , বাবা দিন-মজুর , মা পরের বাড়ির ঝি ৷ সব ঠিকঠাক ছিল একটা দুখী গল্পের মত , কিন্তু সমস্যা দুটি ক্ষেত্রে ৷ এক , সঞ্জীবকে ওর মা-বাবা খুব ভালোবাসে , কোনোদিন তার গা-এ হাত তোলেনি তারা , যা একটা অভাবের সংসারে বড়োই বেমানান ৷ দুই , সঞ্জীব ভালো ফুটবলার এবং অর্থাভাব সঞ্জীবের ‘ফুট’ ও ‘বল’-এ এতদিন একবারও হামল করতে পারেনি ৷ তবে . . . ধার করে বা না করে সঞ্জীবের বাবা সঞ্জীবকে খেলার সমস্ত সরঞ্জাম কিনে দিয়েছে ৷
বিছানায় শুয়ে সঞ্জীব ভাবছে যে পরশু বরাত জোরে প্রাণটাকে নিজের বাঁচিয়েছে ৷ মা চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে , তাই মা-কে এখনও বকা হয়নি ৷ বাড়ির গরুটা অসুস্থ ছিল ৷ তাই সঞ্জীবের জন্য দুধটা ওর মা কিছু দূরে একটা বাড়ি থেকে আনতে গিয়েছিল ৷ ফেরার পথে রাস্তা পার হতে গিয়ে হঠাৎই দেখে একটা গাড়ি প্রায় তার কাছে চলে এসেছে ৷ সঞ্জীব রাস্তাতেই ছিল ৷ সে ঘটনাটি দেখতে পেয়ে মা-কে রাস্তার ধরে ঠেলে দেয় ৷ সঞ্জীব নিজে যদিওবা আঘাত পেয়েছে ৷ মা ঘুম থেকে উঠলে সে মা-কে বকবেই ৷ ছোটবেলায় মা-এর কাছে সঞ্জীব বকা খেত অসাবধানতার জন্য ৷ এখন সঞ্জীবের বয়স আঠারো ৷ এবার সে-ও বকবে ৷
ছোটবেলায় সঞ্জীবের যখন জ্বর হত , ওর মা মাথার পাশে বসে সেবা করে যেত ; কখনও জলপট্টি , কখনও আবর কয়েকটি বড়ি ৷ আজও সেই একইভাবে মা বসে আছে , তবে ঘুমিয়ে পড়েছে ৷ গতকাল মা সারারাত জেগে ছিল নিশ্চয় ! বাবা নেই , ওষুধ আনতে গিয়েছে বোধহয় ! সঞ্জীবের একটু আনন্দ হচ্ছে ৷ কারণ , ঘরের খটখটে তক্তার বদলে গ্রামের হাসপাতালের নরম বিছানায় ও কয়েকদিন শুতে পারবে ৷ পরশুর অ্যাক্সিডেন্টে আঘাত পেয়ে সে এখন হাসপাতালে ৷ অপারেশনের পরে হাঁটুর নীচ থেকে বাদ পড়েছে সঞ্জীবের দুটো পা ও সখের ফুটবল খেলা ৷ টানা দশ ঘন্টা ঘুমানোর পরে এবার ওর তেষ্টা পেয়েছে খুব ! বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ৷ মা-র চোখের নীচে শুকানো কান্নার ছাপ পরিষ্কার ৷ ব্যথায় কাতর সঞ্জীবের গলা থেকে ‘এক গ্লাস জল দেবে’ অনিচ্ছার স্বর ভেসে এল ৷ মা শুনতে পায়নি ৷ ব্যথাটা ক্রমশঃ বাড়ছে ৷ ‘আ . . . হ্’ ! “আঠারো বছর বয়স ভয়ঙ্কর তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা” ৷