বিপজ্জনক(পথে-বিপথে) - Shyamal Kumar Sarkar
বিপজ্জনক(পথে-বিপথে)
শ্যামল কুমার সরকার
ঐ যে ছেলেটা রাস্তা পার হল
কোনো দিকে না তাকিয়ে
দিক্-বিদিক্ জ্ঞানশূন্য হয়ে
দেখতে দেখতে উল্টো দিকে চলে গেল
ওর কি এতটকু ভয়-ডড় নেই ?
কী দস্যি রে বাবা !
আমার বুকটা ধড়াস করে কেঁপে উঠলো ।
সাপের মত এঁকে-বেঁকে
অনেক বাধা অতিক্রম করে
একাগ্র দৃষ্টিতে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটতে ছুটতে
তার লক্ষ্য বস্তুর দিকে এগিয়ে গেল
সাময়িক উন্মাদনায় মানুষের বুঝি
এমনই দশা হয়
ও জানে না যে ও কি করছে
সামনেই সমূহ বিপদ !
তবু তার এতটুকু ভ্রুক্ষেপ নেই
জীবন যৌবনের কাছে হার মেনেছে ।
ঐ যে মেয়েটা মোবাইলে গান শুনতে শুনতে আনমনে
রেল লাইনের মাঝখান দিয়ে যাচ্ছে
ও জানে না যে
রাস্তা শর্ট-কার্ট করতে গিয়ে
জীবনটাই শর্ট-কার্ট করে দিচ্ছে
সামনে-পিছনে দেখার তার সময় নেই
অবজ্ঞা আর অবহেলায়
মানুষের সতর্ক বার্তাকেও সে গুরুত্ব না দিয়ে
মৃত্যুলোকের দড়জায় কড়া নাড়ছে
ও জানে না যে ও কি করছে ।
ওরা জানে না মুহুর্তের অসতর্কতায়
কত বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে
ওদের যদি এতটুকু ধারণা থাকত যে
জীবনটা ক্ষনস্থায়ী,
একটা সরু সুতোর উপর ভর করে
পেন্ডুলামের মত দুলছে, একটা ছোট্ট ভুলে
জীবনে অন্ধকার নেমে আসতে পারে
যে কোনো সময় মুছে যেতে পারে
এই সাধের জীবন ।
ঐ যে লোকটা চলন্ত বাসে বসে ঢুলছে
হাত বাইরে রেখে আরামে ঘুমোচ্ছে
যাত্রীদের কেউ কেউ ওকে সতর্ক করছে
কিন্তু কে কার কথা শোনে
ও জানে না যে কি বিপদ
ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে
একটু আরাম আর দু-দন্ড শান্তির জন্য
জীবনের এত বড় ঝুঁকি
কোনোদিনই মেনে নেওয়া যায় না
আঁকা-বাঁকা পথে,ঝাঁকুনির সাথে
প্রতিটা মুহুর্তে আমাদের বুক কাঁপছে
অথচ সে নির্বিকার,
আমরা ওর ভালো চাইলে কি হবে
যে নিজের ভালো বোঝে না
তার ভালো হবে কি করে ?
এ ভাবেই আমরা আমাদের সমাজের
ভালো মন্দকে মেনে নিতে শিখেছি
রাস্তায় চলতে চলতে এরকমই কত জিনিস
আমাদের নজরে আসে
কেউ কেউ তর প্রতিবাদ করে
কেউ আবার ভ্রুক্ষেপ না করে
দেখেও না দেখার ভান করে
এই পরিচিত ছবির রঙের মেলায়
আমরা আমাদের বিবেক-বুদ্ধি
হারিয়ে ফেলেছি ।
চলমান জগতে এটাই আমাদের জীবনের
প্রকৃত জলচ্ছবি ।