বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

পড়াশুনা - "স্বপ্ন পূরন" নাকি "বিসর্জন" ?? - দেবমানী সাহা

আমি এক সাধারন কলেজ ছাত্রী। কোণো লেখীকা আমি নই, কোনো পত্রিকার পাঠক কলমেও এই লেখা পাঠাতে বিন্দুমাত্র উৎসাহী নই। শুধু আমার দেখা বাস্তব সত্যিটাকে আমি তুলে ধরতে চাই, দেখাতে চাই কঠিন রুড় বাস্তবে সেই নিদারুন ছবি। যা দেখে আমার মতন আরও অনেক ছাত্র ছাত্রী রা পেতে পাড়ে সমবেদনা, সম্মুখীন হতে পাড়ে আজকের যুগ টার সাথে, দুচোখ ভড়া স্বপ্ন গুলোকে হারিয়ে যেতে না দিয়ে তাকে বাস্তব করার লড়াই য়ে নামতে পাড়ে।
ছোটোবেলা থেকেই "মেধাবী" ছাত্রীর লেবেল সেঁটে গেছিল জিবনের সাথে। স্কুলে প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় হওয়ার লড়াই থেকে আমি ও বঞ্চিত ছিলাম না। ধীরে ধীরে স্কুল গন্ডীর শেষের দিকে যখন এলাম তখন আমি নবম বা দশম শ্রেনীতে হয়তো। ব্যাগ ভর্তী বই গুলোর মাঝে উঁকি মারা "সহায়ক পাঠ" বা "পাঠ সংকলন" বই দুটো তখন ই নজর কারতো আমার। বাংলা ভাষা টা কে কতটা ভালোবাসতাম নিজেও জানি না তবে এই একটাই বিষয় ছিল যেটা আমার স্কুল শেষের পরিশ্রান্ত শরীরটার ক্লান্তি দূড় কোরতে পারত। প্রতিদিন পোড়তে বসার শুরুতে যে বই টা পরতাম বার বার। এক ই গল্প গুলো যখন বিভিন্ন সময়ে পরতাম, প্রতিবার ই যেন গল্প গুলো কে নতুন ভাবে উপলব্ধি করতাম। ভালোবাসতাম বাংলা দিদিমনির ক্লাস কোরতে, ভালোবাসতাম বাংলায় রচনা লিখতে...............
কিন্তু "মেধাবী" তালিকার লড়াই য়ে নাম তুলতে গিয়ে কখন যে এই ভালোলাগাটা দূড়ে সরে গিয়েছিল আমার থেকে বুঝতে পারিনী। আগলে রাখতে পারিনী আমার বাংলা বই গুলোকে, রেখে দিতে পারিনী পুরোনো রচনার খাতা গুলো, হারিয়ে ফেলেছিলাম লাইব্রেরীতে বসে চুরি করে বাংলা গল্প বই পড়ার দিন গুলোকে।
একে একে পড়াশুনার একটার পড় একটা ধাপ পেড়িয়ে আসছিলাম। আর তার সাথে সাথেই বাংলা টা হারিয়ে যাচ্ছিল বই এর পাঠ্য গন্ডীর হিসেব থেকে। একাদশ দ্বাদশ শ্রেনী তে যেটুকু বা বাংলা টাকে ধরে রাখতে পেরেছিলাম "বিঙ্গান" পরিমন্ডলে পড়াশুনা করেও কিন্তু স্কুল পেরিয়ে কলেজ ঢুকতেই বিলীন হয়ে গেল আমার ভালো লাগার বিষয় টা, মুছে গেল তার অস্তিত্ব চিরতরে
আজ আমি ইঞ্জিরিয়ারিং এর প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পাঠ্য বই বা বিষয় কোনোকিছুর ই সংখ্যা আজ ও নেহাত কম নয়। কিন্তু সবই বিদেশী ভাষায়। আমার ভাললাগার ভাষা, আমার মাতৃভাষা, আমার জীবনের সাথে নিবীড় ভাবে জড়ীয়ে থাকা বাংলা ভাষা - যাতে আমরা কথা বলি আজ ও, মনের কথাটা প্রকাশ কোরতে যার অবলম্বন আমরা প্রতি মিহুর্তে গ্রহন করি, সেই বাংলা আজ আমার পড়াশুনার সীমিত গন্ডিতে স্থান করে নিতে পারেনী তাই বাঙালী হয়েও আমার চারপাশটা তে বাংলা আজ ব্রাত্য, বাঙালী হয়েও বাংলার পরিবর্তে বিদেশী ভাষার প্রয়োগে বেশী গর্ব অনুভব করি। শুধু কি আমি ই তাই ? তোমরা নও? তোমরাও কি হারিয়ে ফেলোনী এই ভাষা টা কে ? দূড়ে ঠেলে দাও নি তোমাদের থেকে ?
দশম শ্রেনীর পড় কলা বিভাগে ভর্তি হওয়াটা স্বপ্ন ই হয়ে রইলো। দ্বাদশ শ্রেনীর পর বাংলাটাকে স্থায়ীভাবে জীবন সঙ্গী কোরতে চেয়েছিলাম স্নাতকোত্তর পড়তে চেয়ে। কিন্তু স্বপ্ন আজ ও স্বপ্ন ই রয়ে গেছে, এগিয়ে গেছে পড়াশুনো, বদলেছে পাঠ্যপুস্তকের সারি, বদলেছে বিষয়, বদলেছে পড়াশুনার ধরন। তাই সুনিসচিৎ চাকরির সুখময় ভবিষ্যত পেতে যখন ভর্তি হয়েছিলাম কলেজটাতে, দেখেছিলাম ইংরেজী লেখা বইয়ের ভীরে ঠাসা লাইব্রেরীটাতে বাংলা গল্প বইয়ের তিল ধারনের ও স্থান হয় নি তখন ই বুঝেছিলাম "বিজ্ঞান" পরিমন্ডলে মেধাবী ছাত্রীর শিক্ষা জীবনে এগিয়ে চলাটাতে বাংলা কখনই সফর সঙ্গী হতে পারবে না। অন্তত অবসর বিনদনের চাবি কাঠি হিসেবেও বাংলা গল্প বই কে পাঠাগারে স্থান দেওয়া যায়নি। এই হল আমাদের পড়াশুনা - এই হল আমাদের শিক্ষা ............
তাই প্রশ্ন করি নিজেকে, প্রশ্ন করি তোমাদের - "পড়াশুনোটা" কি?? স্বপ্ন পূরোণ নাকি স্বপ্ন বিসর্জন ??