জিরাফ –কন্ঠে আটকে কথা - ANKUR KUNDU
শেষ কবে কথা বলেছিলাম ! আওয়াজ তুলেছিলাম প্রথম কবে ! কবে যেন কেতাদুরস্ত কথা পাঠিয়েছিল বিদ্যুৎ দু’হাত দূরের সাড়ে তিনহাত ভাঙা ল্যাম্পপোস্টে !
শরীর নিয়ে জন্মেও খাঁচার ভিতরে
বিকেল দেখেনি সে , বিকল হয়নি সে ৷
যেটুকু কথা বাইরে ছিল
যেটুকু দৃষ্টি ভিতরে ছিল
খাঁচার জালে আটকে ছিল
কোনও খুনে গল্পের ক্লু-বিহীন
রহস্যের মতো , প্রাণীটি দাঁড়িয়ে নিঃশর্ত ৷
ভোরের আলো ফুটতেই আমি রাস্তায় বেরিয়েছি ! দেখছি দু’টো দেহ হাত ধরে হাঁটছে ! বেলা বাড়লেই আরও দু’টো দেহ ওদের সামনে আসবে !
ও তল্লাটে একটামাত্র গাছ , তা থেকেই
পরগাছা এসেছে , তা খেয়ে প্রাণীটি বেড়েছে
যেটুকু কথা বাইরে ছিল
যেটুকু দৃষ্টি ভিতরে ছিল
গাছের ছালে আটকে ছিল
মূল গাছটির বয়সের অর্দ্ধেক ওর বয়স ,
পরগাছাটি জন্মেছে ওর কথা ফুরানোর পরে !
আমার প্রথম ভুল ছিল জন্মানো ও এগিয়ে যাওয়া ৷ দ্বিতীয় ভুলটি প্রতিবছর আসে উর্ধ্বক্রমানুসারে . . . শেষ ভুলটি ছিল সিসিফাসের মতো . . .
শরীরের দিকে চোখ পড়লেই চোখ
ঘুরিয়ে নিই , ঐ নরম মাংস বহুদিন ছুঁয়ে দেখিনি ৷
যেটুকু কথা বাইরে ও ভিতরে
সেটুকু কথা জিরাফের ঠোঁটের
বাইরে –নিঃশ্বাস হয়ে ধুলো ওড়াচ্ছে
সমগ্র খাঁচায় চিনেবাদামের মতো গা ঘেঁষে
দাঁড়িয়ে আছে , অথচ ওর চোখ ঘষে না ৷
দরজার এ’পাশে দাঁড়ালেই ও’পাশের কথা মনে পড়ে ৷ দরজার ও’পাশে থেকে . . . কখনও যাইনি ও’পাশে ৷ পাপোশে পা মুছে একবার ফিরে দেখি চৌকাঠটিকে ৷
ওর কষ্ট খুব কম হয় ; দুঃখটাই
বরং সম্পূর্ণ ৷ কন্ঠ আছে এবং তা অপূর্ণ ৷
ও কী কথা বলে ?
ও কী আওয়াজ করে ?
কবিতা লিখেই কী ও ক্ষান্ত !
রাংতায় মোড়া এক স্বচ্ছ জীবনের
জন্মদিন জিরাফের গলায় ‘বোবা’ তকমা এঁটেছে ৷
এক শিশুর দেহে হাত বুলিয়ে কাঁদিয়ে ছিলাম ৷ এক নারীর দেহে হাত দেওয়ার আগে থমকেছিলাম ৷ তাই নারীকে আর শিশু বলি না . . জিরাফকে বলি ৷
অনেক বড়ো জায়গায় লিঙ্গভেদে
ও ঘুরে বেড়ায় , ও কাউকে স্পর্শ করেনি ৷
যেভাবে সে তাকায়
যেভাবে সে নিজের খাবারে মগ্ন
সেভাবেই সে কথা বলতে পারে না
শুধুমাত্র কিছু শুকনো পাতার খসখসানি এবং
ওর কন্ঠে কথাদের লড়াইয়ের শব্দ শোনা যায় ৷
খাঁচার বাইরে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম কত কথা ! মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে শুনেছিলাম তার পাশের মানুষকে ! খাঁচার জালে ঝোলানো শুকনো ডাল দেখেও জিরাফটা কথা বলেনি !