বন্ধুত্বের আভার - নয়ন
এক বিদেশী আসে
কোন এক নতুন গ্রাম দেশে
দেখা দেয় তারে সবুজ পথে
লোক জড়ো কত হয়েছে নিমেশে
নতুন লোক! নতুন দেহ!
নতুন গলা! ভিন দেশী কেহ?
কৌতুহল যত, কলরব তত -
বিদেশী ভাবে, মুশকিল কত!
হাত বাড়িয়ে, টেনে নিল কাছে|
(বলল) চল তুমি, গ্রেহ মর পাশে
অজানা দুটি মানুষ যবে চলল একপথে -
বন্ধুত্বের কুসুম মেলিল প্রকাশে!
* * *
কিছু দিন গেছে কেটে সেই দিন হতে -
নতুন কাজ রপ্ত করেছে সে দিবা-রাত্রির স্রোতে|
টাকা-কড়ি, গাড়ি-ঘোড়া, সব জমেছে প্রচুর!
চাপরাশী গণ সবে, বলে, 'জি-হজুর! জি-হজুর!'
ধীরে-ধীরে এই ভাবে চলল যে সময় -
বিদেশীর মনে থেকে হলো সততার ক্ষয়
কুটিল কণনার ছক কষে, সে চতুর, নির্ভয়
দেকে আনল ওপরে নিজের, সে চরম বিপর্যয়!
বন্ধুত্বের অপমানে, বিদেশীর ঘিরে এল কালো ক্ষণ
মন্ত্রীর আদেশ হল, 'ধরে আন! ধরে আন!'
গরিব মানুষের রক্ত রঞ্জিত যে পবিত্র ধন
ছকের দৌলতে লুট করে খায় কে সে শয়তান?
এত দিন সেই বন্ধুটির ও হয়েছে উন্নতি
নগরপালের ভূমিকায় অর্জিত করেছে সে খ্যাতি
মন্ত্রীর আদেশ এল, 'দিতে হবে ফাঁসি!'
কর্তব্যের বেদিতে কেমনে দেবে সে বন্ধুর আহুতি?
সাতে-পাঁচে ছিল যারা, পড়ল সকলেই ধরা
জীবনের ওপরে তাদের দুলল রক্তাক্ত খাঁড়া!
নগরপালের দ্বিধা - চাই একজন বন্ধুর স্থানে
কর্তব্য করিবে সে ত্যাগ, কভু ভাবেবি সে মনে!
বিদেশির কয়, ভয় পাসনি তুই ভাই
তিন দিনে উপায় কিছু বার করবই বিস্তর
'বন্ধু আমার নগরপাল', বিধেশী নিশ্চিন্তে তাই
গুনে যায় দিন, কেটে যায় প্রহরের পর প্রহর!
দুশ্চিন্তায় নত, সে কর্তব্যের ভারে
কেমনে দেবে সে বন্ধুরে বলিদান করে?
স্তম্ভিত বিচার আর কম্পিত স্বরে -
স্মরণ করে সে অদৃশ্য দেবতারে!
মিথ্যা অভিযোগে যারে ধরে আনে বলে -
মনের অন্তরে ধিক্কার, দ্বন্দ হয়ে চলে!
তবে শিগগিরই একপথ, নিশ্চিত করতেই হবে আজ -
রক্ত চায় ন্যায়ের খড়গ, নিয়ে রাত্রির সাজ!
* * *
ভোর হল নিয়ে আলো, খুলল কারাগারের দ্বার
বিদেশী ছুটল, স্তব্ধ শহরে, দিতে বন্ধুত্বের আভার!
থেমে গেল গতি, লোক-জন অতি, চলিছে না কেহ -
প্রাণহীন, নিঃশব্দে, ফাঁসিতে ঝুলিছে নগরপালের দেহ!