বন্যা ২০-০৯-২০১৩ - Shyamal Kumar Sarkar
বন্যা
শ্যামল কুমার সরকার
ঐ শোনা যায় হাহাকার রব,
কুক্কুর আর শৃগালের আর্ত চিৎকার
দিনে দিনে বাড়ে জল, চারিদিক টলমল
দু-চোখের দৃষ্টিতে সব কিছু একাকার
ডুবে যায় মরে যায় কত শত লোক
শোকার্ত মানুষ দুঃখে চেতনা হারায়
জলস্রোতে ভেসে যায় প্রাণহীন শব,
দুর্গন্ধে নাক চেপে বসে আছি কলার ভেলায়
বুকে ব্যথা, চোখে জল, সব চেষ্টা হল বিফল
এক এক করে প্রিয়জন ছেড়ে চলে যায়
জীবনের প্রয়োজনে কেহ বা
তাকেই আবার আঁকড়ে ধরে প্রাণের আশায়
দিনের পর দিন কেটে যায়
দেখতে দেখতে সব রসদ ফুরায়
দুর্যোগ তবু হয় না তো শেষ
বুক বেঁধে বসে আছি
সুদিনর আশায় ।
চারিদিকে মহামারী, খাবারের কাড়াকাড়ি
যে যাহা পায় কুড়ায়ে নিতে চায়
অসময়ের ধন
পেটে ক্ষিধে, বুকে জ্বালা
কি করি উপায়
প্রাণ যে শুকিয়ে যায়
আকাশে তাকিয়ে আছি ত্রানের আশায় ।
কতদিন এভাবে চলিবে কে জানে
সবাই খুঁজিছে আপনজন,
উদাস নয়নে চাহিয়া সুদূরের পানে
যতদূর চোখ যায়
খুঁজে ফেরে ডুবে যাওয়া অতীত আশ্রয় ।
উপরে জল নীচে জল
জলে জলে জলময়
চোখের জলের প্রভা যেন
নদীর জলকে হার মানায়
বাড়ী ঘর পরে গেছে
গরু বাছুর মরে গেছে
রাত জেগে বসে আছি সাধের ভেলায়
না খেতে পেয়ে মানুষ মরেছে
আধপেটা খেয়ে কেহ বা বেঁচেছে
কষ্টের নাহি হয় শেষ, অবাক নয়নে
সুদূরের পানে চেয়ে থাকি আশায় আশায় ।
গাছের উপর - সাপের সহিত
একত্রে করিয়া বাস
ভয়ে ভয়ে রাত কেটে যায়
অসহ্য জ্বালা কাতর চিৎকার
দূর থেকে ভেসে আসে চেনা কন্ঠস্বর
একে একে সব শেষ হয়ে গেল, আপন হল পর !
তবুও সহিতে হবে, মরিয়া বাঁচিতে হবে
অতৃপ্ত নয়নে সব মেনে নিতে হবে
চেতনে বা অবচতন মনে
চারিদিকের যত হাহাকার ।
দিনের বেলায় কেহ বা বাড়ীতে থাকে
যেখানে আছে শুধু এতটুকু ঠাঁই
ভয়ে ভয়ে কেহ বিনিদ্র রজনী জাগে
দিনেতে আহারের কোনো সংস্হান নাই
এই ভাবে ক'টি দিন সন্ত্রাসে কাটে
আকাশে সূর্য উঠে, আবার স্বাভাবিক নিয়মে অস্ত যায়
ক্রমে জল কমে যায়......
কাদা-জলে মিশে সব পুঁতি-গন্ধময়
দেখা যায় জেগে আছে কন্কালসার শুধু ক'টি ঘর
আর সব-ই ভগ্নস্তুপ প্রায়
কাটিয়া গিয়াছে সব হাহাকার !