বিগত দশ বছর ধরে আমরা বিরাজমান। কিছু প্রউক্তুশিল কারণে আমাদের মেইন ওয়েবসাইটটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কাজ চলছে, আমরা আবার আসিব ফিরে। কিন্তু ততদিন আমাদের এতদিনের আর্কাইভটা প্রকাশ করা থাকল। অনেক পুরনো জিনিসপত্র পাবেন, যদি কারর কন আপত্তি থাকে আমাদের কে মেইল করে জানাবেন। admin@werbangali.com
আপনি যদি আমাদের e-commerce shop খুজ্জেন তাহলে এই লিঙ্ক এ ভিজিট করুন : shop.werbangali.com

থট এক্সপেরিমেন্ট - Pinak G Das

নাঃ এমন সময়ে বৃষ্টিটা এলো, আজ আর সময় মতো পৌছানো গেলো না। ছেলে মেয়ে গুলো নিশ্চয় বসে আছে। একটা পুরনো শেড্ এর নিচে দাঁরিয়ে এ এসব ভাবতে ভাবতে একটা সিগারেট ধরালো অনিমেষ। সকাল আটটা থেকে তার টিউশন পড়ানো। এরকম তার প্রায়ই ঘটে, মানে হঠাৎ সিগারেট খাওয়ার মাঝ পথে মনে হয় এই রে কখন জ্বালালাম। এই ক-এক ব্যাচ টিউশন পরিয়েই তার কোনভাবে মাকে নিয়ে ছোট সংসার চলে যায়।।গ্র্যাজুয়েশনের পরে চাকরির চেষ্টা কিছু কম করেনি । দু একটা প্রাইভেট সেক্টর-এ কাজ করতে ঢুকেও ছিলো কিন্তু বেশীদিন টিকতে পারেনি।  বরং এই ভালো, তার ছাত্র ছাত্রীরা তাকে ভালোবাসে। তাদের কৌতুহলী আর মুগ্ধ চোখ দেখতে তার বেশ লাগে। নিজের সবটুকু ঢেলে দিয়ে সে পড়ানোর চেষ্টা করে। ক্লাস টেন অব্দি সব বিষয় সে পড়ায়, ইলেভেন টুয়েল্ভ- এ শুধু ফিজ়িক্স টাই মন দিয়ে পড়ায়। অঙ্কটা  অনিমেষ চাইলেই পড়াতে পারে কিন্তু কেন যেন উঁচু ক্লাসের অঙ্ক তার করতে বেশি ভালো লাগে, পড়াতে ভালো লাগে না। আজকের ব্যাচটা ক্লাস টুয়েল্ভ- এর। সামনে পরীক্ষা তাই দায়িত্তটাও অনেক বেশি।  বৃষ্টি দেখতে অনিমেষের বেশ লাগে। সেই কোন ছোটবেলায় পড়েছে সমুদ্রের, জলাশয়ের জল বাস্পীভূতো হয়ে মেঘ তৈরী হয় আর তার থেকে বৃষ্টি। খুব সাধারণ বিজ্ঞান কিন্তু কী সুন্দর সৃষ্টি। তবে এখন তার বৃষ্টি বিলাষ করার সময় নেই। মায়ের কথা শুনে ছাতাটা নিয়ে বেরলে আর এই বিপাকে পড়তে হতো না। এই জন্যই সবাই বলে মায়ের কথা শুনতে হয়। সিগারেটটা শেষ হতে হতে বৃষ্টি খানিকটা ধরে এলো। একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে অনিমেষ দেখলো বেশ মেঘ করে আছে। কি মেঘ এটা নিম্বাস না কিউমুলনিম্বাস ? সে যাই হোক মেঘ কে তার মেঘ নামেই অনেক ভালো লাগে। সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় আটটা পনেরো বাজে। নাঃ আর দেরি করা চলে না। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সে রওনা হলো। টিউশন ব্যাচে সবাই চলে এসেছে শুধু অরুপ বাদে। নিজেদের মধ্যে গল্পো করছে সবাই শুধু মিঠি বারবার ঘড়ি দেখছে আর ভাবছে কখন আসবে মানুষটা। সকাল সকাল অনিমেষের মুখ দেখলে মিঠির মন ভালো হয়ে যায়। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। অনেক কিছুই সে বুঝতে পারেনা কিন্তু শুনতে খুব ভালো লাগে। অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু কেমন একটা দলা পাকিএ গলার কাছে সব আটকে যায়। তখন মিঠির খুব কষ্ট হয়।  আটটা পঁচিশে অনিমেষ ঢুকল। অভীক বলে উঠলো ছাতা নাও নি অনিমেষ দা, পুরো ভিজে গিয়েছ তো। করুনেষ বল্লো "দাদা এরপরে জ্বর আসবে দেখো" অনিমেষ হাঁসি মুখে বল্লো "মন্দ কি বল, কদিন বাড়ীতে শুয়ে মায়ের আদর খাবো। আর তোরা তো এমনিতেও পড়া টরা কিছু করে আসিস না। তোদের হাত থেকেও মুক্তি" মিঠি কিচ্ছু না বলে তার ওড়নাটা এগিয়ে দিলো। "এটা দিয়ে কি হবে?" অনিমেষ বল্লো। "তোমার মাথা মোছা হবে"। "দূর রাখ এসব, খাতা বের কর"। মিঠি ওড়না না সরিয়েই সোজা তাকিয়ে বল্লো "তুমি নেবে কিনা?" মিঠির চোখের দিকে তাকিয়ে অনিমেষ আর না বলতে পারলো না। মেয়েদের এই চোখের দৃষ্টি অগ্রাহ্য করার শক্তি প্রকৃতি কোনো পুরুষ কে দেয়নি। সে ওড়না দিয়ে মাথা মুছে এলোমেলো চুলে হাত দিয়ে কিছুটা ঠিক করে নিয়ে পড়াতে বসে গেলো। সবায় বলে উঠলো "দাদা আজ না পড়লেই নয়? এরকম ওয়েদার এ পড়তে ভালো লাগে না। বরং কিচ্ছু গল্পো বলো" অনিমেষ আটকে উঠে বল্লো  "পাগল নাকি? সামনে তোদের পরীক্ষা, গল্পো পড়তে পড়তেই হবে। আর তাছারা ফিজ়িক্স তো পুরোটাই একটা মজার গল্পো। বের কর তদের আগেরডিন যে প্রাব্লম গুলো দিএচ্ছিলাং সেগুলো আগে দেখি, তারপরে ভাব্বো।" প্রই সবাই মুখ ছোট করে নিজের খাতা বের করলো। এক এক করে সব সলিউশন খোঁজা শুরু হলো। মিঠির খাতা ভুলে ভরা। সে আপ্রাণ চেষ্টাকরে অনিমেষের সাব্জেক্ট এ কিচ্ছু ভুল না করতে কিন্তু উল্টোটাই হই বেশি। "মিঠি বিজ্ঞান কে ভালবাস তাহলে বিজ্ঞান ও তোকে ভালবাস্‌বে" মিঠি হঠাৎ বলে ফেল্লো "কাউকে ভালবাসলেই বুঝি সেও পাল্টা ভালোবাসবেই?" অনিমেষ চোখ সরিএ নিয়ে বল্লো অ্যাট লীস্ট বিজ্ঞান তো বাসে। বিজ্ঞান কাউকে হতাশ করে না"। মিঠি মাথা নিচু করে নিলো। ক্লাস প্রায় শেষে দিকে এরকম সময় অনিমেষ একটা সিগেরেট ধরালো। করুনেষ এই সময়টার অপেক্ষায় থাকে। এটা তার নানা রকমের প্রশ্ন করার সময়। করুনেষ পড়াশুনায় খুবই ভালো। ফিজ়িক্স আর ম্যাথামেটিক্স এ ব্রিলিয়াণ্ট শুধু কেমিস্ট্রীটাই যা একটু ঝামেলা করে। অনিমেষ তার সব ছাত্রো ছাত্রী কেই ভালোবাসে কিন্তু সে জানে এই ছেলেটা সবার থেকে আলাদা। খুব সাধারণ দেখতে কিন্তু অসাধারণ আগ্রহ আর পোটেন্ষিযালিটী। সাধারণের ভিতরেই তো লুকিএ থাকে অসাধারণ। তাই মন দিয়ে সব প্রশ্নের সে উত্তর দেয়। কোনো উত্তর না জানা থাকলে ভাবনা চিন্তা করে পরের দিন এসে দেয়। তার চিন্তা মিঠিটাকে নিয়ে। করুনেষ জিজ্ঞেস করলো "আচ্ছা অনিমেষ দা মানুষের মন, তার অনুভূতি, তার আক্টিভিটি এই সব কে কী বিজ্ঞান দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়?" "কেন যাবে না?", বল্লো অনিমেষ, "দেখ সব ই দাঁড়িএ থাকে লজিক আর আলগোরিদমের ওপর। ডিশিসন মেকিংগ মনে যেকোনো সিধ্যান্ত নেওয়ার অ্যালগো, অনেক গুলো লজিক মিলিয়ে একটা ডিশিসন মেকিংগ । এই দেখ না সাইকলজিস্ট রা তো মানুসের মন, মস্তিস্ক সব বিজ্ঞানের দৃষ্টি দিয়েই বিচার করে আবার ধর আর্টিফিশিযল ইন্টেলিগেন্সে। তবে হ্যাঁ, এটা বলতে পারিস যে মানুসের দুর্বোধ্য মনের অনেকটাই বোঝা বরো দুস্কর। সবটা হয়তো এখনো বিজ্ঞান ধরতে পারেনি কারণ মানুসের মস্তিস্ক আর তার সব কেমিকাল সিগনালস্ দের অনেক কিছুই এখনো অজানা কিন্তু জানবি কোনকিচ্ছুই ব্যখ্যাতীত নয়।" যেমন মিঠি যে ভাবে আমার দিকে তাকায় মনে মনে ভাবলো অনিমেষ, সেকি আমার দেখার ভুল না অন্যও কিছু আছে এর পেছোনে। নিজের ভাবনায় ডুবে গিয়েলো অনিমেষ । এবার সিগেরেটটা ফেলে দিয়ে বল্লো "এই যেমন ধর আলো। কোয়াণ্টাম মেকানিক্সের গোড়ার কথা। আলোর যেমন কণা ধর্মও আছে তেমন তরঙ্গ ধর্ম আছে। দুটোই আছে একসঙ্গে। আমাদের মন ও কিন্তু অনেকটা সেই রকম। ধর তোর শরীর খারাপ বা কিছু একটা হয়েছে। তুই তর কোনো প্রিয়জন কে বললি সেকথা। এবার দেখ তুই হইটো চাইবি যে সে জেনো কষ্ট না পায়। আবার সে একটুও কষ্ট না পেলে তোর ভালো লাগবে না। একই সঙ্গে হ্যাঁ আবার না। আমাদের প্রায় সব চিন্তাই কিন্তু এই রকম। ডুয়ালিটি আমাদের মজ্জায় মজ্জায়। যেমন ধর কোয়াণ্টাম মেকানিক্সের অন্যতমো প্রসিদ্ধ নাম শ্রোয়েডিন্গার, তার একটা বিখ্য়াতো এক্সপেরিমেংট আছে বেড়াল নিয়ে। সেই পরীক্ষায় তিনি একটা বেড়াল কে একটা বাক্সে রেখে সেই বাক্সে একটা বিষাক্ত গ্যাস ভরা বোতল রাখলেন। বোতলের সঙ্গে লাগানো একটা হাতুড়ি। আর হাতুড়ির সঙ্গে লাগানো সুতো। এমন ব্যাবস্থা করা হলো যাতে বাইরে থেকে টানলে সেই হাতুর্‌টা বোতল ভেঙ্গে দেবে আর বাক্সে বিষাক্ত গ্যাস ভরে বেড়াল টা মারা যাবে। এবার দেখ ,  শ্রোয়েডিনগার দেখলেন যে সুতো টা টানার ঠিক আগের মুহুর্তে সুতর দশা দুটো; টানা হয়েছে এবং হয় নি, অতএব হাতুড়ি ঘা মেরেছেএবং মারেনি, বোতল ভেঙ্গেছে এবং ভাঙ্গে নি আর বেড়াল টা মারা গিয়েছে এবং যায় নি। এই সময় বাক্সো খুল্লে দেখা যাবে দুটো বেড়াল। একটা জীবন্ত, আরেকটা মৃত। আমাদের চিন্তাগুলোও এইরকম। এতক্ষন সবায় হাঁ করে শুনছিলো, স্রমনের মুখ দিয়ে বেরিএ গেলো "ভাবা যায়? এও কী সম্ভব!" অনিমেষ বল্লো " বিজ্ঞানে সবই সম্ভব। তোরা মন দিয় পর। এরপর হাইযার স্টাডীস করলে অনেক কিচ্ছু জানতে পারবি। মিঠি ক্লাস শেষ হলে সবার শেষে রোজ বেরোয়। ও খুব বাড়ো বাড়ির মেয়ে। বাবা নাম করা ইনডাস্ট্রিয়ালিস্ট। মাধ্যমিকে ভালো রেজ়াল্ট করার পরে বাড়ি থেকে বলেছিলো ভালো টিউটর রাখার কথা কিন্তু মিঠি রাজী হয় নি। সে অনিমেষ এর কাছে ক্লাস এইট থেকে পরে। বাবা মাও খুব আপত্তি করেন নি। কারণ অনিমেষ যেমন ব্রিলিয়াণ্ট স্টুডেন্ট তেমনি ভালো শিক্ষক। দেখতে দেখতে পরীক্ষার দিন এগিয়ে আসছে। ক্লাস, কোচিং সব এখন বন্ধো। এখন বাড়িতে শেষ মুহূর্তের পড়ার সময়। কিন্তু মিঠি কিছুতে মন বসাতে পারছছে না। শুধু অনিমেষদার কথা মনে হচ্ছে। অনিমেষদার কথা, তার মুখ, তাকানো এসব মনে পড়ছে। এরপর একটা কান্ড হয়ে গেলো। পরিক্ষার হলে হঠাৎ মিঠির হঠাৎ নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়ে গেলো। অন্ধকার হোয়ে এলো সব। প্রায় কিছুই লিখতে পারলো না। করুনেষ খুব ভালো রেসাল্ট করেছে। সবার থেকে ভালো যেমন সবাই আশা করেছিল। প্রণাম করে সে অনিমেষ কে মিষ্টি খাইয়ে গেলো। বাকীরও তাই করলো। অনিমেষ এর খুব খুসি হওয়ার কথা, হয়েছেও তাও মনটা কেনো জানি ভালো নেই। সবাই এসেছে মিঠি বাদে। সবাই চলে যাওয়ার পরে অনিমেষ আর থাকতে পাড়লো না, গুটি গুটি পায়ে চলে গেলো মিঠির বাড়ি। সেখেনে এখন শোকের পরিবেশ। মিঠি ফিসিক্স-এ ব্যাক পেয়েছে। খবরটাঅনিমেষ আগেই বাকীদের মুখে শুনেছে তাই তারও মুখ অন্ধকার। মিথির মা ঢুকতেই বল্লো "বাবা তুমি মন খারাপ করো না, আমরা জানি তুমি তোমার সবটুকু দিয়ে ওকে পড়িয়েছ, পরিক্ষার দিন হঠাৎ ওই শরীরটা না খারাপ হলে এরকম হতো না। তুমি বরং ওর ঘরে গিয়ে বস। আমি একটু চা করি"। কোন আপত্তি না করে মিঠির ঘরে গেলো অনিমেষ। এই ঘরে সে এর আগে পড়াতে এসেছে প্রায় বছর দুএক আগে। তখন মিঠি একাই পড়ত তার কাছে। ঘরে খুব বেশি পরিবর্তন হয় নি। ছিম ছাম করে সাজানো তরুনীর ঘর। দেওয়ালে দুটো পোস্টার, টেবিলে একটা ফ্যামিলী ফোটো। স্টাডি টেবিলের সামনে খোলা চুলে মাথা নিচু করে বসে আছে মিঠি। সামনে একটা খাতা খোলা। মিথির ফিসিক্স-এর খাতা। তার কাছে যেতেই অনিমেষের চোখ পড়লো খাতার ওপর। খাতাটা তার চেনা তবু একটা ধাক্কা মতো লাগলো তার বুকে। সারা পাতা জুড়ে অসংখ বার শুধু তার নাম লেখা।     মিঠি মাথা তুলে অনিমেষ কে দেখে হাঁসলো। কিছু একটা বলতে নিলো কিন্তু অনিমেষ থামিয়ে দিয়ে বল্লো " আজ কিচ্ছু বোলনা, মন খারাপ ও করো না"। অদ্ভুত এক বিশদময় হাঁসি হেসে মিঠি মাথা নিচু করে নিলো। তারপর মাথা তুলে একটা ঢোক গিলে বল্লো শুধু বলবে ওই বেড়ালটার তারপর ঠিক কী হয়েছছিলো বেঁচে ছিলো না মারা গিয়েছিলো? আমার তো আর সায়েন্স নিয়ে পড়া হবে না"। অনিমেষ বল্লো "কিচ্ছুই হয়নি মিঠি, ওই এক্সপেরিমেন্টটা একটা থট এক্সপেরিমেন্ট। কিছু জিনিস শুধু চিন্তায় আর মননে সম্ভব হয় বাস্তবে কখনো সম্ভব হয় না" অনিমেষ বুঝতে পড়লো তার গলা ধরে আসছে। মিথির চোখ থেকে জল গড়িয়ে তার বুকে এসে পড়লো। অনিমেষ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল। কথাও না থেমে হাঁটতে থাকলো বাড়ির দিকে। অঙ্ক করতে হবে। অনেক অনেক কঠিন কঠিন অঙ্কো। তার খুব পুরনো অভ্যেস, খুব মন খারাপ হলে অঙ্ক করা।