সামর্থ ও কর্তব্য - Shyamal Kumar Sarkar
সামর্থ ও কর্তব্য
শ্যামল কুমার সরকার
মায়ের দাবী, বউয়ের আবদার
ছেলে মেয়ের অফুরন্ত চাহিদা
চাহিদার শেষ নেই
সব মেটাতে মেটাতে আমি আজ ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, অবসন্ন......
সময়ের সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলার যে প্রবনতা
আজ চারিদিকে দেখতে পাচ্ছি
প্রতিনিয়ত মানুষের মানসিকতার যে পরিবর্তন হচ্ছে
তার সাথে আমার আয়-ব্যয়ের হিসাব কিছুতেই মিলছে না
কোথায় যেন একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে ।
হিসাবশাস্ত্রের প্রতিটা পাতায় অনেক কালির আঁচড় দিয়েছি
কিন্তু কোনো কূল-কিনারা পাইনি
কোনো সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি নি
এ যেন বিজ্ঞানের ঠিক করে দেওয়া একটি বিন্দুতে দাঁড়িয়ে
কালচক্রের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে
শুধু ধুরেই যাচ্ছি বন্ বন্ করে
চোখের সামনে প্রতিনিয়ত কত জিনিস তৈরী হচ্ছে
প্রাকৃতিক নিয়মে তারাই আবার
অনন্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে
ধ্বংস হয়ে সৃষ্টি করছে নতুন জীবন !
মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যেমন
তার শক্তি অনুযায়ী কোনো জিনিষকে
নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে
চুম্বকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝে পরে যেমন কোনো জিনিষ
নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে
তেমনি দড়ি টানাটানির এই খেলার প্রতিযোগীতার কবলে পরে
আমার অহমিকা দিশাহারা হয়ে পরেছে
আমার অহংকারকে অতীত ও বর্তমান প্রজন্ম
নিজের মত করে তৈরী করতে চাইছে
আমি কিছুতেই তা মেনে নিতে পারছি না
এ আমার ব্যক্তি-স্বার্থের উপর চরম আঘাত !
কি করব ভেবে পাচ্ছি না
আমার সমস্ত হিসাবকে ওই সংশয়
ওলোট পালোট করে দিয়েছে
নীতিবিরুদ্ধ কাজ কছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছি না
তবুও প্রতিবাদের কোনো রাস্তা নেই
সংসারের এমনি মায়া যে
মরিচীকা দেখে মরূদ্যান ভেবে
জীবনের আঁকাবাঁকা পথ পার হতে হবে
কাঁটায় কাঁটায় জর্জরিত হয়েও
মনের বল ও ইচ্ছাশক্তির উপর ভরসা করে
শত প্রতিকূলতাকে জয় করতে হবে
চাহিদার জগদ্দল পাথর
যতই বুকের উপর চেপে বসুক না কেন
সব যন্ত্রনা মুখ বুঁজে সহ্য করে যেতে হবে ।
একটুখানি শান্তির জন্য কত কান্ডই না করতে হচ্ছে
ছলে, বলে কৌশলে যেভাবেই হোক
সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে
বাঁচার মত বাঁচতে হবে
পরশ পাথরের আশায় জন্ম-জন্মান্তর ধরে
ছুটতে ছুটতে আমি হাঁফিয়ে উঠেছি
গ্রহ হতে গ্রহান্তরে ঘুরে বেড়ীয়েছি
পরিতৃপ্তির আশায়
পরজিবী হয়ে কে বাঁচতে চায়
নিজ পায়ে ভ'র দিয়ে কে না চলতে চায়
প্রতিনিয়ত খুঁজে বেড়াচ্ছি
স্বাবলম্বী হবার সেই সহজতম উপায় ।
দিন রাত হাড় খাটুনি খেটেও
কূল কিনারা পাচ্ছি না
মাথার ঘাম পয়ে ফেলেও
কাহারো মন জয় করতে পারছি না
চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে তফাৎ
ক্রমাগত বেড়ে চলেছে
কলুর বলদের মত আমি
টাকার পিছনে ছুটছি, ছুটছি আর ছুটছি
ছুটে চলেছি অবিরত
চড়কির মত অবিরাম ঘুরে চলেছি
কক্ষচ্যূত হতে হতেও
কতবার নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছি ।
টাকার মূল্য যে কি তা আমি বুঝি,
টাকা ছাড়া যেসব-ই ফাঁকা !
টাকায় কি না হয় ?
মানুষের হৃদয় ছাড়া সব-ই জয় করা যায় ।
খুব প্রয়োজনে পকেট হাতড়ে যখন দেখি
শেষ কড়িটাও খরচ হয়ে গেছে
বুকটা কেমন যেন ধড়াস্ করে কেঁপে উঠে
চারিদিক অন্ধকার ঠেকে
কি করব ভেবে না পাই,
দিশাহীন, আশাহত আমার চঞ্চলমন
আঁকা-বাঁকা পথে সঠিক ঠিকানা খুঁজে বেড়ায় ।
আমি আজ কপর্দকহীন, তাই
সমাজের রক্তচক্ষুকে দেখে বড়ো ভয় হয়
অসহায়ের মত উদাস নয়নে
চেয়ে থাকি অনিশ্চয়তার দিকে, বিষন্নবদনে
সদাই কুঁকড়ে থাকি হীনমন্যতায় ।
যারা বলে টাকার কোনো মূল্য নেই
তারা হয় মিথ্যে কথা বলে, না হয়
নিজের মনকে শান্তনা দেবার জন্য
বের করেছে সহজ উপায় ।
সংসারের যাঁতাকলে নিজেকে পিষিয়ে দিয়েও
কিছুতেই কুলিয়ে উঠতে পারছি না
অমানুষিক পরিশ্রম করেও
সবার সব চাহিদা মেটাতে পারছি না ।
সীমিত উপার্জন আর অপরিমিত ব্যয়
আমার জীবনকে স্তব্ধ করে দিয়েছে
সমতার বেড়া অতিক্রম করেও
কাহারো মন জয় করতে পারছি না
হায় ! নিজের সততাকে বিসর্জন দেবার
ক্ষমতা যে আমার নেই
বন্ধ ঘরের অন্ধ কূপের মধ্যে প'রে
হাঁফিয়ে উঠেছি
সমাজের চোরাস্রোতে ডুবতে ডবতেও
কতবার বেঁচে গিয়েছি ।
এ ভাবেই আমরা প্রতিনিয়ত
নিজেদের অহমিকার সাথে যুদ্ধ করে
ভালো মন্দের সাথে আপস করে
মিলে মিশে এক হয়ে গেছি
সবাইকে খুশি করতে গিয়ে
নিজের অজান্তে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি
চলমান অবক্ষয়ের দিকে
চেতনার উন্মেষ ঘটলেও
সেই চক্রব্যূহ থেকে বেড়ীয়ে আসতে পারি নি
সমাজের হাঁড়িকাঠে মাথা দিয়েও আমি
বাঁচার অদম্য ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারি নি
কঠোর কৃচ্ছ্বসাধনে নিজেকে নিয়োজিত করেছি
দশের সেবায়
সুস্থভাবে বাঁচতে চেয়েছি
সমাজে মাথা উঁচু করে থাকতে চেয়েছি
পরিতৃপ্তির আশায় ।
বুকের যন্ত্রনাকে মুখ বুঁজে সহ্য করেও
সমাজের শত প্রলোভনকে দূরে সরিয়েও
আমরা সুষ্ঠভাবে জীবন যাপন করতে চাই
লক্ষ্য স্থির, উচ্চ আশা, অফুরন্ত ঊচ্ছ্বাস নিয়ে
সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই
জীবনের মূল্যকে অনুভব করতে চাই
অনেক অনেকদিন
ভবিষ্যত প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে......।